গোপালগঞ্জে অপূর্ব-লিপিকা দম্পতি টমেটো চাষে করে ভাগ্য ফেরালেন
ঘেরের আইলে টমেটো চাষ করে ভাগ্যে ফেরালেন অপূর্ব বিশ্বাস (৪৮) ও লিপিকা বিশ্বাস দম্পতি। গত ১৪ বছর ধরে সফলতার সাথে তারা টমেটো চাষ করে আসছেন। এ দম্পতি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত। গত ১ মসে তারা ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আগামী ৩ মাসে আরো ৩ লাখ টাকার টমেটো বিক্রির আশাবাদ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ দম্পতি।
গত বুধবার তার ঘেরের আইলে গিয়ে দেখাগেছে টমেটো গাছের সমাহার। বাঁশের সাথে আইলের দাঁড়িয়ে আছে টমেটো গাছের সারি। টমেটো গাছে ধরেছে প্রচুর টমেটো। অপূর্ব বিশ্বাস ও তার স্ত্রী লিপিকা হালাদার দিন-রাত টমেটো গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কাঁচা-পাকা টমেটো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। অপূর্ব-লিপিকা দম্পতির ৩ একরের ঘেরে ৬০ শতাংশ আইল রয়েছে।এ আইলে তারা হাইব্রিড বিউটি ও বিপুল প্লাস জাতের ৪ হাজার ২০০ টমেটো গাছ রোপণ করেছেন। এরমধ্যে ২ হাজার ১০০ গাছ আগাম বিউটি জাতের। তারা বিউটি জাতের টমোটো ১ মাস আগে থেকে তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করছেন। এ জাতের টমেটো তারা ১ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। বিপুল প্লাস জাতের ২ হাজার ১০০ টমোটো গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। ১৫ দিন পর তারা এ জাতের টমোটো বিক্রি করবেন। টমেটোর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে অপূর্ব- লিপিকা দম্পতির মুখে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, রঘুনাথপুর পূর্ব-দক্ষিণপাড়া গ্রামের এ দম্পত্তির আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। এ দম্পতি ১৪ বছর ধরে ঘেরের আইলে টমোটো চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এখন তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতিটি গাছ থেকে ওই কৃষক দম্পতি ৫ কেজি করে টমেটোর ফলন পাবেন। সেই হিসেবে তারা চলতি মৌসুমে কমপক্ষে ২১ মেট্রিক টন টমেটো ফলন পাবেন। গড়ে প্রতি কেজি টমেটো ২০ টাকা দরে বিক্রি করলে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার টমেটো তারা বিক্রি করতে পারবেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, এ দম্পতি বিউটি ও বিপুল প্লাস জাতের হাইব্রিড টমেটো চাষ করেছেন। টমেটোর কোয়ালিটি বেশ ভালো । বাজারে এ টমেটোর চাহিদাও ব্যাপক। তাই ভালো দাম পেয়ে এ দম্পতি টমেটো চাষে লাভবান হয়েছেন। ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কৃষিতে তারা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সফল কৃষক অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, ঘেরের আইলে টমেটো চাষে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১ মাসে আগে মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি কেজি টমেটো ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন প্রতি কেজি টমেটো ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। আশা করছি আগামী ৩ মাসে আরো ৩ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারব।
অপূর্ব বিশ্বাসের স্ত্রী লিপিকা হালদার (৩৮) বলেন, আগে আমাদের সংসারে অভাব অনটন ছিল। আমরা অভাব অনটন দূর করতে নিজেদের ৩ একর জমিতে ঘের কাটি। ঘেরে বর্ষাকালে মাছ চাষ করি। শুস্ক মৌসুমে এখানে বোরো ধানের চাষাবাদ করি। ভাগ্য পরিবর্তের আশায় ২০০৮ সালে স্বামী-স্ত্রী ঘেরের আইলে টমেটো চাষাবাদ শুরু করি। টমেটো চাষে আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। এছাড়া ঘেরের আইলে সারা বছর করলা, শশা, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষাবাদ করি। দিনরাত পরিশ্রম করে প্রচুর ফসল উৎপাদন করি। এ আয় দিয়েই ছেলে অর্পণ ও মেয়ে অর্পিতাকে স্কুলে পড়াচ্ছি। এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেশ ভালো আছি। আমাদের দেখাদেখি অনেকে দম্পতি টমেটো চাষে ঝুঁকেছেন।
রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সার ও বীজ ডিলার কাজল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিউটি, বিউটি-২ আগাম হাইব্রিড জাতের টমেটো। এ টমেটো নভেম্বরের প্রথম দিকে পাকে। আগাম জাতের এ টমেটো ভালো দামে বিক্রি হয়। টমেটোর সাইজ ভালো। পাকার পর টমেটো টাইট থাকে। পরিবহনে সুবিধা হয়। পাকার পরও ৫ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এসব কারণে কৃষক বিউটি জাতের টমেটো বেশি আবাদ করেন।
রঘুনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান শ্রীবাস বিশ্বাস বলেন, এ দম্পতি টমেটো চাষের পাশাপাশি কৃষি কাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের দেখাদেখি আমাদের গ্রামের অন্তত ২৫ দম্পতি টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করে বেশ ভালো আছেন।