প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় সভাপতির সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা তা মাথায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

যারা মানবাধিকারের কথা বলছেন এবং দূরবীন দিয়ে গণতন্ত্র খোঁজেন,তাদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা (তথাকথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা) ভুলে গেছেন যে জিয়াউর রহমান দেশে গুম ও হত্যার সংস্কৃতির সূচনা করেছিলেন । মানুষ খুন করে গুম করে ফেলা হতো। জিয়াই দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তার থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে দেশে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।

তিনি বলেন, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সর্বদা সামরিক স্বৈরশাসকদের সরকার এবং দেশে জরুরি অবস্থাকালিন সময়কে পছন্দ করেন, কেননা সেই তাদের কদর বেড়ে যায়, তারা অগ্রাধিকার পান । আর সেজন্য তারা যেন দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই ধ্বংস করতে চান। তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয়, তারা দেশে বলবৎ সামরিক শাসনামলেই গণতন্ত্র খুঁজে পান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী, বিষয়টি আসলেই তাই কি না, তাদের খোলাসা করতে বলেন।

জনতাই তাঁর মূল শক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই জনতার শক্তিতে বলিয়ান হয়েই আগামীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে যে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, ২০৪১ সাল নাগাদ তা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। কাজেই বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবেনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আওয়ামী লীগই দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করেছে এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোন্ দল এত ভালোভাবে মানুষের অধিকার রক্ষা করেছে ?

করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি দেশবাসীকে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে কঠোরতা প্রদর্শন এবং সংকট মোকাবেলায় সঞ্চয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার জাতীয় কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডায়াসে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নতি করতে পেরেছে। যে বাংলাদেশ ছিল সন্ত্রাসের, দুর্ভিক্ষের, দুর্নীতি এবং দুবৃত্তায়নের সেই বাংলাদেশ আজ গণতন্ত্রের এবং উন্নয়নের।

সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়। ‘দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে’ তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেনীর এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুনী বলে পরিচয় দেন, তাদের মুখেও শুনি গণতন্ত্র নাকি আনতে হবে দেশে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- সামরিক শাসকরা মার্শাল ল দিয়ে রাষ্ট্র চালিয়েছিল, সেটাকেই কি তারা গণতন্ত্র বলতে চান নাকি ? ওইটাই কি তাদের গণতান্ত্রিক ধারা ? তারা কি খোলাসা করে সেটা বলতে পারেন ? সেটাতো করেন না।’

‘আওয়ামী লীগ যখন থেকে এই দেশে সরকার গঠন করেছে, তখন থেকেই এই দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় ছিল, তখনই মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।’

বিএনপি কোন মুখে ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে, তা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে ফলাফল কি ? বিএনপি পেয়েছিল ৩০ টা সিট (আসন)। এটা সবার মনে রাখা উচিত। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে না। আর আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি পায়। তাহলে পরবর্তী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোন মুখে প্রশ্ন তোলে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক এগারো সরকার আন্তর্জাতিক চাপ ও দেশের মানুষের আন্দোলনের কারণে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল । তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সবসময় একই প্যারালালে নিয়ে আসা হোত। কিন্তু আওয়ামী লীগের শক্তি যে দেশের জনগণ, এটা অনেকে ধারণাই করতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘স্বচ্ছ ব্যালেট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে কে ? আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা আসার পরে এবং আমাদের দলীয় প্রস্তাবে এগুলো ছিল। খালেদা জিয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৬ সালে ভোট করতে চেয়েছিল। এটা কেউ ভুলে যায় নাই। জনগণের ভোট চুরি,অর্থ চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, এগুলো থাকলেই তাদের কাছে গণতন্ত্র।

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছে, মানুষ মেনে নেয়নি। এরপর ২০০১ এ সরকার গঠন করে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছে, জনগণ মেনে নেয়নি। সে নির্বাচন বাতিল হয়েছে। বিএনপি, খালেদা জিয়াকে দুই দুই বার ভোট চুরির অপরাধে সরে যেতে হয়েছে।

দেশে গুম খুনের সংস্কৃতির প্রবক্তা জিয়া উল্লেখ করে সে প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জিয়ার আদেশ পালন করা জেলের জল্লাদরাও অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন যে, কী ঘটে যাচ্ছে এসব ? সে সময়ে সাদা মাইক্রোবাসে যাদের তুলে নিয়ে গেছে, তাদের লাশও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। জিয়ার আমলে সেনাবাহিনীতে যে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। রাজশাহী-বগুড়া-ঢাকা-খুলনা কারাগারসহ বিভিন্ন কারগারে হিসাব মিলিয়ে দেখবেন শত শত সেনা অফিসার, সৈনিক, বিমানবাহিনীর অফিসার এবং অগণিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। তাদের পরিবার তো লাশই পায়নি। লাশও গুম করে ফেলা হয়েছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে জনসমর্থন বাড়িয়েছে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে। আজকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নতি হয়েছে।

‘আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুনী বলে পরিচয় দেন,’ তাদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি জানি না, যারা এখনো গণতন্ত্রের খোঁজ করেন, মনে হয় যেন দুরবীন দিয়ে ওনারা গণতন্ত্র খুঁজতেছেন, তাদের আমি জিজ্ঞেসা করবো- জাতির পিতার সাড়ে তিনবছর ও আওয়ামী লীগের আমল ছাড়া কবে গণতন্ত্র ছিল ? ক্ষমতাতো ছিল সেননিবাসে বন্দী। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই তো ( সব আমলেই তো ) সেনানিবাসে বন্দী। সেনানিবাস থেকে চালানো হত দেশ। তাহলে গণতন্ত্র বা জনগণের শক্তিটা কোথায় ? জনগণের শক্তি ছিল না। তিনি বলেন, জনগণতো সেখানে অবাঞ্চিত, শক্তি ছিল না।

যারা এই ১৪ বছর নিয়ে কথা বলেন, তাদের বলবো এর আগের বাংলাদেশটা দেখেন, আর এখন বাংলাদেশটা দেখেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছি। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে যেসব দল সেনাশাসকের পকেট থেকে গঠিত হয়েছে- যেমন বিএনপি বা জাতীয় পার্টি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, তারা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। যাদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে, তারা আবার আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়, পরামর্শ দেয়, গণতন্ত্র নাকি আবার প্রতিষ্ঠিত করবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুরে ধরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নতি করেছে। যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতি, দুর্বত্তায়নের ছিল, আজকে সে দেশ গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। আওয়ামী লীগ একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে বলেই সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি।’

করোনা মোকাবেলায় সরকার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় আমি মোবাইল ফোনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বলেছি ফাইল পরে পাঠাও আগে মানুষ বাঁচাও। আমার কাছে মানুষ বাঁচানোটাই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করে। দুর্নীতি খোঁজে। যেখানে মানুষ বাঁচানো, খাবারের ব্যবস্থা করা, যারা হাত পাততে পারে না তাদের বাঁচানো। এর থেকে আর কতটুকু বেশি সেবা দেশে আর কোন দলের নেতা-কর্মীরা দিতে পেরেছে ?

বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফেরত প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমেরিকায় খুনি রাশেদ, কানাডাতে খুনি নূর, পাকিস্তানে খুনি রশিদ আর ডালিম আশ্রয় নিয়ে আছে। মোসলেম উদ্দিন বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। কখনো তার হদিস পাওয়া যায়, কখনো যায় না। কিন্তু প্রতিটি দেশের সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেছি তাদের ফিরে আনতে। এরা জাতির পিতার হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী- এদেরকে ফেরত দিতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের কাছ থেকে আমরা সেই সাড়া পাই না।

তিনি বলেন, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হল, সেই বিবেচনা তাদের নেই। কিন্তু ওই খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত। কারণ তাদের ফাঁসির হুকুম হয়েছে। সেজন্য তাদের অধিকার রক্ষা করে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুভার্গ্যের বিষয়।


শেয়ার করুন

Similar Posts