অগ্নি সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অগ্নি-সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
আজ বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল হাসান। কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার কথাও শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সতর্ক থাকুন যাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেউ বাধা দিতে না পারে, কেউ আবার অগ্নিসংযোগ-সন্ত্রাস করার সাহস না পায়, এবং কেউ আর যাতে কখনো কারো জীবনের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম প্রসঙ্গে বলেন, ‘হ্যাঁ আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। ঠিক আছে জনগণকে নিয়ে করবে। সেক্ষেত্রে যদি কোন ধ্বংসাত্মক কার্জ করে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে।’
‘কারণ আজকে বাংলাদেশের যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি সেটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। এজন্য আমাদের শ্রম দিতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে, পরিকল্পনা করতে হয়েছে। যার ফলে মাত্র ১৪ বছরে আমরা বাংলাদেশের বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি,’ বলেন তিনি।
তিনি পুলিশের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তজাতিক সমস্যার কারণে সৃষ্ট সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা, মানব সৃষ্ট দুর্যোগ- যেমন অগ্নি সন্ত্রাস বা নানা নৈরাজ্য যেখানে পুলিশ সদস্যদেরকে নির্দয়ভাবে মারা হয়েছে, আমরা দেখেছি। কাজেই ভবিষ্যতে যাতে আমাদের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা কেউ ব্যহত করতে না পারে। কেউ যেন আর ঐ অগ্নি সন্ত্রাস করার সাহস না পায়। মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা যেন কেউ বিঘিœত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইন শৃঙ্খলাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীকেই পালন করতে হবে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং সেক্টর ওয়াইজ বাহিনী করে সার্বিক সুযোগ-সুবিধা তাঁর সরকার বৃৃদ্ধি করে দিয়েছে কারণ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। থানা, তদন্ত কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও তাঁর সরকার করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু নিজেরাই মুখে বলি না সারাবিশ্ব ও স্বীকার করে এই করোনা মোকাবিলা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময় অর্থনৈতিক নীতিমালাকে শক্তভাবে ধরে রাখা এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখার মত একটা দুঃসহ কাজ আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। আর এই করতে পারার পেছনে আপনাদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। পৃলিশ বাহিনীরও অবদান রয়েছে। এজন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলবো এই অগ্রযাত্রাকে কেউ যেন ব্যহত করতে না পারে। এটুকুই আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে। যে কোন দল ও মতের অনেক কিছু থাকতে পারে কিন্তু দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে এবং দেশের কল্যাণে কোন কেউ যেন কোন ধ্বংসাত্মক কিছু করতে না পারে, কোন কাজে যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, কোন ক্ষেত্রেই যেন এই অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি শুনেছেন এবং যতটুকু করা যায় তিনি এবং তাঁর সরকার তা করবে। কারণ, অনেক কিছুই তাদের দাবি করতে হয়নি তিনি নিজে খোঁজ নিয়ে জেনে সে সব সমস্যার সামাধান ইতোমধ্যে করে দিয়েছেন।
জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেটা পূরণ করাটাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারি একটি জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে মথা উঁচু করে চলবে, কারো কাছে হাত পেতে নয়। ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর স্মার্ট বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে ওঠা উচিত। পুলিশের প্রতি মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস যেন থাকে সেটাই বড় কথা। এই বিশ্বাস এক সময় ছিলই না। তাঁর সরকারের জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগের ফলে পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আপনারা সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছেন বলেই মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন। যে কোন সমস্যার সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন সমস্যার সমাধান কেউ এককভাবে করতে পারেনা বা একটা যুদ্ধ সেনাবাহিনী একা করবে বা সশস্ত্র বাহিনী করলেই জিতে যাবে তা কিন্তু নয়, এই যুদ্ধে কিন্তু মানুষের সমর্থন লাগে। এজন্যই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৯৬ হাজার সৈনিকসহ লোকবল ও ছিল কিন্তু তারপরও জনসমর্থন না থাকার কারণেই তারা আমাদের কাছে পরাজিত হয়েছে। কিছু দালাল তারা তৈরি করেছিল সেই রাজাকার আলবদররা ছাড়া সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করেনি। কারণ সাধারণ মানুষ জাতির পিতার ডাকে যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শক্রুর মোকাবিলা করেছিল। আর আমাদের এই যুদ্ধ জনযুদ্ধ ছিল এবং গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পর্যন্ত জাগ্রত ছিল কিভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দিবে এবং এই বাধাদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষ ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। যার ফলে আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী সেই বিজয়ের উদাহারণ টেনে চলমান বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে দেশে মন্দাবস্থা বিরাজ করার প্রসঙ্গের উল্লেখ করে বলেন, এই অর্থনৈতিক মন্দা যদি আমরা মোকাবিলা করতে চাই তাহলে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। কিছু সমস্যা আমাদের সকলেরই হবে, সেখানে কৃচ্ছতা সাধনতো আমাদের করতেই হবে। আর এটা সাময়িক ব্যাপার। আমি আশাকরি এ অবস্থা থাকবে না।
তিনি এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজে করতে হবে যেন আমাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি। সেই মানসিকতা নিয়েই আমাদের চলতে হবে।