প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির জন্য বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক মনোযোগ পেয়েছে : মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন বৈশ্বিক পরাশক্তির ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা (ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব) অর্জন করেছি। আমি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ অনেক দেশ ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমাদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে’।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সফরের মধ্যে আজ ভোরে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং ঢাকায় যাত্রাবিরতি করার সময় মোমেন এ মন্তব্য করেন।
বর্তমানে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছেন।
এদিকে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফ্রিকা যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘এটা ভালো খবর, আমরা অনেক দেশ থেকে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছি’। তিনি বলেন, ভূ-রাজনীতি ছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। তারা (বিদেশিরা) বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশে প্রচুর ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। কেউ হাতছাড়া করতে চায় না, বাংলাদেশও সব দেশের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত থাকতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘এটি একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়’। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির কথা অর্থাৎ “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়”- এই নীতি সফলভাবে বজায় রেখে চলেছে। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে (যুক্তরাষ্ট্র ও চীন) সমস্যা থাকতে পারে … এটি তাদের মাথাব্যথা… আমরা আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখব (যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের সঙ্গে)’।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘খুব ভালো’। আমরা এটিকে (বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক) আরও দৃঢ় করতে চাই।
বিমানবন্দরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়ে মোমেন বলেন, তাদের মধ্যে খুবই উপকারী ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সুসংবাদ হল যে চীন আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে অংশীদার হিসাবে কাজ করতে চায়।
সকালে বৈঠক শেষে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তার চীনা প্রতিপক্ষকে বলেছেন, ‘ঢাকা চীনসহ সব দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখে। আমি তাকে (গ্যাং) বলেছিলাম … আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি বজায় রাখছি, তাই আমাদের সকলের (দেশের) সঙ্গে হাঁটতে হবে … আমরা সময়ে সময়ে আপনাদের (চীন) প্রতিও আমাদের সমর্থন প্রসারিত করব’। মোমেন জানান, তিনি তার চীনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্প, টিকা সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
মোমেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমরা এক চীন (নীতিতে) বিশ্বাস করি। এটাই আমাদের নীতি’। দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধানের বিষয়টি উত্থাপন করে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৯৮ শতাংশের জন্য শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার জন্য বেইজিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।