ন্যাশনাল ব্যাংকের বড় অংকের ঋণ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা
ন্যাশনাল ব্যাংকের ১০ কোটি টাকার বেশি অংকের ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিদ্যমান অনুমোদিত যে কোনো ঋণ সুবিধায় সমঅংকের বেশি ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি নগদ আদায় ছাড়া পুরোনো ঋণ নবায়ন করা যাবে না। শতভাগ নগদ টাকা জমা ছাড়া কোনো এলসি খোলা নিষেধ।
সম্প্রতি ব্যাংকটিকে এসব নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ব্যাংকে ব্যাপক ঋণ অনিয়ম ও বেনামে ঋণ বিতরণের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকটির আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। অবশ্য ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনা নতুন নয়। এর আগেও ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকের একজন শীর্ষ গ্রাহকের চাপে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন গত বুধবার পর্ষদের চাপে পদত্যাগ করেন। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করেছেন। এটা শুনেছি। এ বিষয়ে ব্যাংকের পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে। তবে ব্যাংকটিতে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। বড় ঋণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়- সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত কৃষি, চলতি মূলধন, এসএমই ও ভোক্তা ঋণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার আওতায় ঋণ বিতরণ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। এছাড়া ঋণপত্র খুলতে হলে গ্রাহকের কাছ থেকে পুরো টাকা আগে ফেরত নিতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আগে অনুমোদন হওয়া ঋণের অর্থের ১০ কোটি টাকার বেশি বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আগের ঋণের বকেয়া অর্থ নগদ আদায় ছাড়া ওই ঋণ নবায়ন করা যাবে না। অন্য ব্যাংকের কোনো ঋণ অধিগ্রহণ করা যাবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, সর্বশেষ এ পদক্ষেপের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংককে নিয়মে ফেরাতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে বেসিক ব্যাংক ও সাবেক ফারমার্স (এখন পদ্মা) ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক দুটি বিপর্যয়ের হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা পায়নি। এখন ন্যাশনাল ব্যাংকের বিষয়ে একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গত বুধবার ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার আর ব্যাংকে যাননি তিনি। এমডি পদে তার মেয়াদ ছিল আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ব্যাংক খাতের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছিল যে, পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করলেও মেহমুদ হোসেনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় তাকে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউসে ডেকে নেওয়া হয়। এরপরই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের আগে মেহমুদ হোসেন এনআরবি ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ার এমডি ছিলেন। এর আগে ছয় বছরে চারজন এমডিকে মেয়াদ শেষের আগেই ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
মেহমুদ হোসেন পদত্যাগ করায় ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সৈয়দ রইস উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।