ডিসি সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ,উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

জেলাপ্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন ঢাকায় শুরু হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুক্ত আলোচনায় যোগ দেবেন জেলা প্রশাসকরা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রথম কার্য অধিবেশনটিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাকি সব কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে সচিবালয়ের বিপরীত পাশে অবস্থিত ওসমানী মিলনায়তনে। এবারের ডিসি সম্মেলনে ২৪৫টি প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।

জানাগেছে, সম্মেলনে উপজেলায় হস্তান্তর করা সকল উন্নয়ন প্রকল্প উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব ডিসিরা। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত ১৭ দপ্তরের অনেক উন্নয়ন কাজ পরিষদের কর্তৃত্বে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতে করে উপজেলার সার্বিক কার্যাবলির ওপর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের তদারকি নেই। আলোচ্য প্রস্তাবের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত কাজে উপজেলা পরিষদের কর্তৃত্ব বহালের সুপারিশ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার ডিসি হুমায়ুন কবির বিভিন্ন বাহিনীর নামে প্রতারণা বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এ দণ্ডবিধির ১৭০, ১৭১ ও ৪১৯ ধারা তফশিলভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। বিশেষ কোনো ব্যক্তি পদে অধিষ্ঠিত না হয়েও সেই পদের পরিচয় দেয় এবং বিভিন্ন বাহিনীর নামে প্রতারণা করে, যা দণ্ডবিধিতে এ ধারাগুলো অনুযায়ী অপরাধ। মোবাইল কোর্ট আইনে উল্লিখিত ধারাগুলো যুক্ত করলে এ-সংক্রান্ত অপরাধ দমন সহজ হবে বলে মনে করেন তাঁরা।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেনারেল প্রসিকিউটর (জিপি) নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিসিদের সুপারিশ নিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিসিদের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সরকারি মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে পিপি, জিপিদের প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে ডিসিদের সুপারিশে অভিযোগ করা হয়েছে। তাই তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিসিদের সুপারিশ থাকলে এ-সংক্রান্ত কাজে গতি আসবে।

তিন পার্বত্য জেলার উপজেলাগুলোতে রাজস্ব আয় নেই। তাই এই তিন জেলাতে নির্দিষ্ট হারে থোক বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।

অন্যদিকে, জেলা পর্যায়ে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন গোপালগঞ্জের ডিসি। সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের বাইরে বিজিবির সদস্যরা ফায়ার করলে নির্বাহী তদন্তের মাধ্যমে তার যৌক্তিকতা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছেন খাগড়াছড়ির ডিসি। এসব ঘটনায় নির্বাহী তদন্তের সুযোগ না থাকায় এ-সংক্রান্ত ঘটনা নিষ্পত্তি না হয়ে ঝুলে থাকছে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

বঙ্গীয় জুয়া আইন যুগোপযোগী করার প্রস্তাব করেছেন নরসিংদীর ডিসি। বন্দিদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলার সুযোগ দিতে প্রস্তাব করেছেন মৌলভীবাজারের ডিসি। এর যুক্তিতে তিনি বলেছেন, এতে করে কারাগারে দর্শনার্থীর ভিড় কম হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকার আয়-ব্যয় কর্মকর্তার দায়িত্ব চান ডিসিরা। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- সার্কিট হাউস, ডিসি হাউস, বিভাগীয় কমিশনারের ভবন ও বিভাগীয় পর্যায়ের ১২ তলা সার্কিট হাউসসহ এসব ক্ষেত্রে দায়িত্ব গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। ফলে এগুলোর গুণগত মান বজায় থাকছে না বলে মনে করছেন ডিসিরা।

পার্বত্য জেলাগুলোর ডিসিরা জেলার ব্যবস্থাপনা সভা-সংশ্নিষ্ট জেলার ডিসিরা করতে চান। বর্তমানে এ-সংক্রান্ত সভাগুলো জেলা পরিষদের নেতৃত্বে হয়। নদী, খাল ও বিলের অবৈধ উচ্ছেদে আলাদা বরাদ্দ চান ডিসিরা। বর্তমানে এ-সংক্রান্ত কাজের জন্য ডিসিদের পৃথক কোনো বরাদ্দ নেই।

সীমান্তবর্তী নদনদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতের কাজ নির্বিঘ্ন করতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের আপত্তির কারণে সীমান্তবর্তী নদনদীর বাঁধ মেরামতে সমস্যা হয়। এতে বন্যার সময় অনেক এলাকা অপ্রত্যাশিতভাবে প্লাবিত হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি উত্তরণে উভয় দেশের সম্মতিক্রমে দেড়শ গজের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে প্রস্তাব দিয়েছেন সাতক্ষীরার ডিসি।

বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য জব ফেয়ার আয়োজনের প্রস্তাব এসেছে বরগুনা জেলার ডিসির কাছ থেকে। প্রতিটি জেলায় এ-সংক্রান্ত মেলার আয়োজন করলে মানুষ বৈধভাবে বিদেশ যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। অন্যদিকে দালালদের দৌরাত্ম্য কমবে বলে প্রস্তাবের যুক্তিতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিলের প্রস্তাব করেছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক। অধিকতর যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও পোষ্য কোটার কারণে তুলনামূলক দুর্বল প্রার্থী চাকরি পেয়ে যান, শিক্ষার মান কমে যায়, একই পরিবারের চাকরিজীবীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র পরিবার এবং মেধাবী প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়। প্রতি পরিবারে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের যে নীতি, সেটা ব্যাহত হয়।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার মতো সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহের ডিসি। বিধিমালা না থাকায় সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে শ্রেণি কার্যক্রমে তাঁদের দায়সারা আচরণ দেখা দেয়। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলে শিক্ষকতা পেশা থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া বন্ধ হবে।


শেয়ার করুন

Similar Posts