স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দেয়: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছন, দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করতে হবে। স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বললেন তিনি।

আজ বুধবার গাজীপুরের মৌচাকের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরী ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

স্কাউট আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট দেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি শিশুকে দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। স্কাউটদের নৈতিক ও জীবনমুখী শিক্ষা দিয়ে, সেবা দেওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন করে দেশপ্রেমিক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই আমাদের দেশটা আরো চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক যেখানে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান হবে না। দেশ সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসমুক্ত থাকবে। কাজেই বাংলাদেশে যে শিশুরা বড় হবে তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে তরুণদের মাঝে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল গুণাবলী বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলছে। পরোপকারি হিসেবে সমাজ সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিড-১৯ কালীন স্কাউট সদস্যদের সেই আন্তরিকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। কাজেই আমি চাই আমাদের দেশে এই স্কাউট আন্দোলন আরো ব্যাপকভাবে গড়ে উঠুক।

দেশে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করবে।

বিশ্ব স্কাউটস জাম্বুরী ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ লক্ষে প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কাব স্কাউটসদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ করেন এবং তাঁর নিজের স্বাক্ষরিত সনদপত্র ১২ জনের হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এবং জাম্বুরী আয়োজক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।

প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক ও জাতীয় স্কাউটদের জাম্বুরী চিহ্নিত করে একটি স্মারক ডাক টিকিট ও অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

নয়দিন ব্যাপী জাম্বুরীতে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, স্কাউট চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং কানাডা থেকে ৮ হাজার স্কাউট, ১ হাজার ইউনিট নেতা এবং আন্তর্জাতিক পরিষেবা দলের সদস্যসহ মোট ১১ হাজার অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমাদেরকে কেউ আর ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বরং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।’

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আজকের শিশুরাই আগামীদিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে পরিনত হবে।

দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, আমাদের স্কাউটের সঙ্গে যারা জড়িত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন এই স্কাউট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার বিশ্বাস তাহলেই আমাদের দেশকে সোনার বাংলা বা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে।
শেখ হাসিনা জানান, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ’ুটি করে স্কাউট দল বা রোভার স্কাউট গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ছেলেদের পাশাপাশি গার্ল স্কাউট বা মাদ্রাসাসমূহে স্কাউট যেন গঠন করা হয় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে সকলকে।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থী এখানে শুধু বাছা বাছা কয়েক জন নয়, প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে যে পর্যন্ত স্কাউটিং করা যায়, এখন যদিও আমাদের ২২ লাখ সদস্য আছে কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে ত্রিশ লাখ স্কাউট করা হবে। আমার লক্ষ্য হবে প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংঘাত, ক্ষমতা দখল, আগুন সন্ত্রাসসহ সব বাধা পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, আমরা মানুষকে সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্র্যান্ড লাইন আমরা সমস্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী দেশের স্কাউট আন্দোলনকে শক্তিশালীকরণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউট শতাব্দি ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ব্যয়ে সিলেট অঞ্চলে মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালমাই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তা ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণের ৪র্থ পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাক, গাজীপুরের আওতায় বনভূমি বিনাশ না করার শর্তে আরো ৯৫ একর ভূমি বরাদ্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্কাউট সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোর-যুবাদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখনই শিশুদের মাঝে আসেন তখন তাঁর ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে খুঁজে পান। ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা, মা, ভাইদের, ভাতৃবধুদের সঙ্গে ঘাতকরা সেদিন তাঁকেও রেহাই দেয়নি।

সেই প্রেক্ষাপট স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের জীবন নিরাপদ হোক, সুন্দর হোক, অর্থবহ হোক। কারণ, আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। আমাদের সকল শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক আমি তা-ই চাই।

অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তাঁর সরকার বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে টেনে এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ ২০২২ সালে আমরা দেখেছি এই বাংলাদেশ কিন্তু এমন ছিল না। প্রতিনিয়ত সংঘাত, খুনোখুনি, অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা, নির্বাচন নিয়ে খেলা-নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। তবে, ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।

জাতির পিতা কন্যা মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানবতার সেবা সবচেয়ে বড় সেবা। মানুষের জন্য কাজ করতে পারলেই সবচেয়ে বেশি আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। পরে, স্কাউটদের পরিবেশনায় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।


শেয়ার করুন

Similar Posts