ড. ইউনূসের পক্ষে মার্কিন সংবাদপত্রে বাংলাদেশবিরোধী বিজ্ঞাপন, প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উর্ধ্বে তুলে ধরে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রে টাকা খরচ করে এই কুৎসা রটানোর হীন উদ্দেশ্য বাংলাদেশ সরকারের বিষোদগারও করা হয়। যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সুযোগ নিতে পারে।
ওয়াশিংটন পোস্টে ড. ইউনূসের পক্ষে বাংলাদেশবিরোধী বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের জন্য তারিখ হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সেই দিনটিতে বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন প্রচার যেন স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গেই একাত্মতা প্রকাশ।
ইউনূসের পক্ষে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে যে ৪০ জন বিশ্বনেতার নাম এসেছে তাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও আছেন। হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে গ্রামীণব্যাংকের বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন ড. ইউনূস।
যুক্তরাষ্ট্র আইনের শাসনের কথা বলে। অথচ ড. ইউনূসের পক্ষে হিলারি ক্লিনটনসহ মার্কিন প্রশাসন যেভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছিলেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এ বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠেছিল মার্কিন পার্লামেন্ট কমিটিতে।
এবার হঠাত্ ওয়াশিংটন পোস্টে ড. ইউনূসের পক্ষে বিজ্ঞাপন প্রকাশের পরপরই তা নিয়ে খবর প্রকাশ করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব ঐ দুই পত্রিকা তখন রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার ফর্মুলা প্রচার করেছিল। এবারও প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ড. ইউনূসকে দৃশ্যপটে আনতে তত্পরতা চালাচ্ছে।
ডেইলি স্টার লিখেছে, নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ‘একজন অনবদ্য পরিশুদ্ধ মানুষ এবং তার কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশ সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং বারবার হয়রানি ও তদন্তের মধ্যে পড়ছে।’ এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। বিষয়টিকে ‘বেদনাদায়ক’ উল্লেখ করে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন।
গত ৭ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টের সাত নম্বর পৃষ্ঠাটি বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার হয়। ৭ মার্চ ওই পৃষ্ঠায় সাড়ে ১৮ ইঞ্চি, পাঁচ কলামে ওই খোলা চিঠিটি ছাপানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনের আকার ছিল সাড়ে ৯০ কলাম ইঞ্চি। ওই পৃষ্ঠায় মোট ছয় কলামের মধ্যে এক কলাম নিউজ ছিল। আর নিচের দিকে অন্য একটি বিজ্ঞাপন ছিল আড়াই ইঞ্চির।
হিসাব করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির রেট অনুসারে বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৫২ হাজার ১২৮ মার্কিন ডলার। টাকার হিসাবে যা দাঁড়ায় ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৬ টাকা। কিন্তু গেল দুই বছরে সবকিছুর খরচ বেড়েছে। যে কারণে পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেটও বেড়েছে। অনলাইনে পাওয়া তথ্যানুসারে বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট ৮০৭ ডলার। সে হিসাবে ইউনূসের এই বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। ডলারের দাম ১০৭ টাকা ধরে টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা। এ টাকা কে বা কারা দিয়েছেন কিংবা ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি নেওয়ার নেপথ্যে কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ‘ড. ইউনুস অন্যায় করেছেন। তাই গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ টেলিকম নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এটাকে হ্যারাসমেন্ট বলার কোনো সুযোগ নেই। এই চিঠি ষড়যন্ত্রের আলামত।’
মাহবুবউল আলম হানিফ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ইউনূস দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন এমন নজির নেই। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার বিন্দুমাত্র অবদান নেই। উল্টো মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়ার অজস্র রেকর্ড আছে। দেশের দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়ে কবে কার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এমন একটা নজিরও কেউ দেখাতে পারবে না।
হানিফ বলেন, ‘ড. ইউনুসের সাথে কিসের অন্যায় হচ্ছে? তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। কোথায় কত টাকা আত্মসাত্ করেছেন তার তদন্ত হচ্ছে। নোবেল বিজয়ী কি আইনের উর্ধ্বে? আমেরিকার এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন মামলা হয়েছিলো। পরে জেলেও গিয়েছিলেন। আইন সব দেশে সকলের জন্য সমান।’
ড. ইউনূসকে নিয়ে ‘বিশ্বনেতাদের বিবৃতি’র খবর প্রসঙ্গে প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটিকে বিবৃতি বলা যাবে না, এটি একটি বিজ্ঞাপন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ৪০ জনের নামে একটি বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন আর বিবৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে।’
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘ড. ইউনূস বাংলাদেশের জেষ্ঠ্য নাগরিক। তার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, এইভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি আমি বাংলাদেশে দেখি নাই। বিশ্ব অঙ্গনেও এরকম হয় কিনা জানিনা। এরকম বিবৃতি কেনা বা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি, সেটাকে আবার কোটি টাকা খরচ করে প্রকাশ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। যেভাবেই হোক ইউনুস সাহেব নোবেল জয়ী। তার পক্ষে এরকম একটা বিবৃতি বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপানো -এটি তার ব্যক্তিত্বকেই খর্ব করেছে। আমার প্রশ্ন- তার এত টাকা কোথা থেকে আসে?’