ড. ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিশ্বব্যক্তিত্বের অভিযোগ ‘একেবারে অলীক’ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফাইল ফটো।
শেয়ার করুন

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিশ্বব্যক্তিত্বের অভিযোগকে ‘একেবারে অলীক’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, রোল মডেল…পৃথিবী স্বীকার করেছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। অনেকে, যাঁরা বাংলাদেশকে দেখতে পারেন না, শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন রকমের প্রচেষ্টা চালান।…শেখ হাসিনার কারণেই এই উন্নয়নগুলো তরতর করে হচ্ছে। তাঁরে (শেখ হাসিনা) যদি বাদ দিতে পারি, তাহলে এখানে একটি অস্থিতিশীলতা হবে। সেই তালেই তাঁরা আছেন। সে জন্যই তাঁরা বিভিন্ন ফন্দিফিকির করছেন…বাট আই মাস্ট সে…এগুলো হচ্ছে আঙুর ফল টক। যে অভিযোগ করেছেন, আই মাস্ট সে, এগুলো একেবারে অলীক।’

উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ৪০ জন বিশ্বব্যক্তিত্ব সম্প্রতি এক খোলা চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানান। খোলা চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণপাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

সীমান্তে স্থাপনা নির্মাণে ‘আপত্তি’ তুলে নেবে ভারত:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণে আপত্তি তুলে নেবে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য জি-২০র পররাষ্ট্রমন্ত্রিদের বৈঠকে অংশ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন গত ১ থেকে ৩ মার্চ নয়াদিল্লি সফর করেন। ওই বৈঠকের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের কিছু সমস্যা ছিল। ১৫০ গজের মধ্যে যে সমস্ত স্থাপনা নির্মাণ করার চেষ্টা করেছিলাম, ভারত এটাতে বারবার বাধা দেওয়ায় কাজ হচ্ছে না। যেমন ধরেন আমাদের রেললাইন। তারা (ভারত) এগুলোতে তাদের ‘অবজেকশন উইথড্র’ (আপত্তি প্রত্যাহার) করেছে। যার ফলে, আমাদের কাজগুলো সুচারু হবে। কয়েক জায়গাতে তারা (আপত্তি) তুলে নেবে।’’ উল্লেখ্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন, কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদা নদী সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের ডিজেল পাঠাবে। পাইপ লাইন হয়ে গেছে। আগামী ১৮ মার্চ ভার্চুয়ালি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটার উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সীমান্ত হত্যার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান মোমেন।

তিনি আরো জানান, দিল্লি সফরটা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, যেগুলো ছোটোখাট সমস্যা আছে। মোমেন বলেন, আমরা এগুলো আবার তুলেছি। আমি বলেছি, অঙ্গীকারটা রাখেন। আমরা কেউ চাই না, তারাও চায় না একটা লোক মারা যাক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত হঠাত্ করেই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় আগে থেকে এ বিষয়ে জানা যায়। বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত বলেছে, এ বিষয়টি তারা দেখবে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কষ্টে আছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন:

জি-২০র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দেখা ও আলাপ হয়েছিল মোমেনের। সেই আলাপের সূত্র ধরে মোমেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, ‘আমার দেশে আমি অনেক কষ্টে আছি। আপনি তো অনেক ভালো আছেন। আমার দেশে প্রাইভেসি আইন, ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যান্ড মিডিয়া—এগুলোর জ্বালায় আমি বড় কষ্টে আছি। আপনার থেকে বেশি কষ্টে আমি আছি।’ মোমেন বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমার পাশে বসেছিলেন এবং অনেকক্ষণ আলাপ করেছেন। আমাদের মতো দেশগুলোর সমস্যা, তাদের দেশের সমস্যা- এগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। এটি অত্যন্ত গঠনমূলক আলাপ। তাদের উপলব্ধি খারাপ নয়। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন লোক নানা উসকানিমূলক আচরণ করে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো বন্ধন তৈরি করতে পেরেছি।’

মোমেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলাপ হলেও র্যাব ও এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, আমরা যে উন্নয়ন করেছি, সেটিতে তাঁরা আরও সম্পৃক্ত হতে চান।

তাঁরা বলেছেন, তাঁদের দেশেও লোক মারা যায়, পুলিশ মেরে ফেলে এবং তোমাদের দেশেও হয়। কিন্তু সেগুলো সরকার করে না এবং আমার দেশেও সরকার করে না। এগুলো নিয়ে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে।


শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত