৫১টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন
দেশের ৫১টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি।
বৃহষ্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেল বেলা ৩ টায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের ১২ টি জেলা ও ৩৯ টি উপজেলায় মোট ৫১ টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের শুভ উদবোধন করেন তিনি। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়াসহ জুম অনলাইনে ৫১ টি জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসময় বলেন, “সরকারি চিকিৎসকগণ এযাবৎ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিকেলে চিকিৎসা সেবা নিতে প্রাইভেট হাসপাতাল/ ক্লিনিকে যেতে হতো। এই বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং সেভাবে তিনি নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোগী হয়েছি। আমরা মনে করেছি, এই ব্যবস্থা চালু হলে দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। সেজন্য আজ আপাতত পাইলটিং আকারে দেশের ১২ জেলা ও ৩৯ টি উপজেলার মোট ৫১ টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের শুরু করা হলো। এই কার্যক্রম মানুষের ভালো লাগলে আমরা এ বছরেই দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
‘সরকারি হাসপাতালগুলো কিসের ভিত্তিতে কাজ করবে’ এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আমরা একটি নীতিমালা প্রনয়ণ করেছি। সেই নীতিমালা অনুযায়ী সব কাজ পরিচালিত হবে। নীতিমালায় একজন চিকিৎসক বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, কীভাবে করবেন তা বিস্তারিত লেখা আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় অনলাইন জুম এপে যুক্ত থাকা ৫১ জেলা উপজেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ঐ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে সরাসরি কথা বলে অনুভূতি জানতে চান। এসময় যুক্ত সবাই এই কার্যক্রম শুরু করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
যেসকল সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সুচনা হলো তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, ঢাকা বিভাগের ১০জেলা মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল, রাজবাড়ি জেলা সদর হাসপাতাল, ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এছাড়াও রয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের ৮ জেলায় প্রথম ধাপে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এগুলো হলো- ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল এবং পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল, নোয়াখালী সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার মধ্যে রয়েছে- জামালপুর জেলা সদর হাসপাতাল এবং সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শেরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
খুলনা বিভাগের চার জেলায় এই বৈকালিক সেবা চালু হয়েছে। এগুলো হলো- ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতাল, যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রাজশাহী বিভাগের তিন জেলায় বৈকালিক সেবা চালু হয়েছে। এগুলো হলো- নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল এবং সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় এই সেবা চালু হলো। এগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁও জেলা সদর হাসপাতাল, কুড়িগ্রাম জেলা সদর হাসপাতাল, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুরের বদরগঞ্জ এবং গংগাচরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নীলফামারীর ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
বরিশাল বিভাগের তিন জেলায় এই সেবা চালু হয়েছে। এগুলো হলো- ভোলা জেলা সদর হাসপাতাল এবং চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সিলেট বিভাগের চার জেলায় এই সেবা চালু হচ্ছে। এগুলো হলো- সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল এবং ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেটের গোপালগঞ্জ এবং বিশ্বনাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইত্যাদি।
এগুলোর বাইরে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে সেগুলোতেও বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি।