আমতলীর হতদরিদ্ররা ঈদে পেল পঁচা চাল,খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার শাস্তি দাবি জনপ্রতিনিধিদের

শেয়ার করুন

বরগুনার আমতলী উপজেলার হতদরিদ্ররা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহারের বিশেষ ভিজিএফ’র পঁচা চাল পেল। উপকারভোগীদের অভিযোগ চাল মানুষের খাওয়ার উপযোগী না, হাঁস-মুরগীকে খাওয়াতে হবে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারে খাদ্য সহায়তাকে পুঁজি করে হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য গুদাম থেকে পঁচা চাল সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ করেন জনপ্রতিনিধিরা। ওই চাল বাধ্য হয়ে জনপ্রতিনিধিরা হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরন করেছেন। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে পঁচা চাল বিতরনের সাথে জড়িত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের শাস্তি দাবী করেছেন জনপ্রতিনিধি ও উপকারভোগীরা।

জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরদরিদ্রদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৩ হাজার ১’শ উপকার ভোগীদের মাঝে জনপ্রতি ১০ কেজি করে ১৩১.১০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করেছেন। ওই চাল উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে সরবারহ করা হয়। এ সরবরাহকৃত চালের মধ্যে অন্তত ২০ মেট্রিকটন চাল পঁচা, পোকে খাওয়া ও কালো বলে জানান গুদামে কর্মরত শ্রমিকরা।

অভিযোগ রয়েছে গত আমন মৌসুমে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির ফাতেমা অটো রাইস মিল মালিক মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে আতাত করে অন্তত এক’শ মেট্রিকটন পঁচা চাল সংগ্রহ করেছে। ওই চাল ভালো চালের সাথে খামাল করে রেখে দিয়েছেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য গুদামে কর্মরত শ্রমিকরা। ঈদে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে অন্তত ২০ মেট্রিকটন পঁচা চাল খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের সরবরাহ করেছেন। ওই চাল গত তিন দিন ধরে জনপ্রতিনিধিরা বিতরন করছেন। উপকারভোগীদের অভিযোগ জনপ্রতিনিধিরা পঁচা চাল বিতরন করছেন। চাল এতোই পঁচা যা মানুষের খাবার উপযোগী না। হাঁস ও মুরগীকে খাওয়াতে হবে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গুলিশাখালী,কুকুয়া ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখাগেছে, জনপ্রতিনিধিরা চাল বিতরন করা হয়েছে। ওই বিতরনকৃত চালের মধ্যে অনেক চাল পঁচা। চাল লাল, কালো ও ধুসর বর্ণ ধারন করেছে। পোকায় খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। চালের মধ্যে পোকা হাঁটছে।

গুলিশাখালী গ্রামের বৃদ্ধা ভারা ভানু বলেন, সরহার মোগো চাউল দেছে হ্যা এ্যাকছের পঁচা। পোহে ধরা। এ্যা চাউল খাইতে পারমু না। হাঁস-মুরারে খাওয়াইতে অইবে। আষ্ট সার চাউল পাইলাম হ্যাও পঁচা। মোগো কপালই ভালো না।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের শাখারিয়া গ্রামের সোনে আলী খাঁন বলেন, চালে পোকায় ধরে নষ্ট করে ফেলেছে। ওই চাল হতদরিদ্রের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাঁচ মেট্রিকটন চালের মধ্যে অন্তত ১০-১২ বস্তা চাল পঁচা বের হয়েছে।

কুকুয়া ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের হাকিম আলী বলেন, চাউল এ্যাকছের পঁচা। কি হরমু গরিব মানু এ্যাইয়াই খাইতে অইবে? সরহার ঈদে পচা চাল দেছে।
আমতলী সদর ইউনিয়নের ঝন্টু বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে পঁচা চাল দিয়েছে। ওই চাল আমরা পেয়েছি।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ মাহমুদ সেলিম বলেন, খাদ্যগুদাম থেকেই পঁচা চাল সরবরাহ করেছে। আমারতো কিছুই করার নেই। ওই চাল বিতরন করা হয়েছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, সরকারী খাদ্য গুদাম থেকে চাল দিয়েছে, সে চাল পঁচা হলেও আমি বলতে পারি না।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন হাওলাদার বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে পঁচা চাল সরবরাহ করেছে। ওই চাল বাধ্য হয়ে বিতরন করেছি।

তিনি আরো বলেন, পঁচা চাল বিতরনের কথা খাদ্য গুদাম কর্তকর্তাকে জানিয়েছি। যা বিতরন করা হয়েছে। আর কবরো না। পঁচা চাল খাদ্য গুদামকে ফিরিয়ে দেব।

কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত হতদরিদ্রদের চাল অপেক্ষাকৃত খারাপ।

আমতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, গুদামে কোন পঁচা চাল নেই। গুদাম থেকে পঁচা চাল সরবরাহ করা হয়নি। হতদরিদ্ররা পঁচা চাল পেলো কোথায় এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শেয়ার করুন

Similar Posts