গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা, আপিলের সুযোগ আছে
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতার জন্য দাখিল করা মনোনয়ন বাছাইয়ে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আরো দুজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। দাখিল করা ১২ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ও জাহাঙ্গীর আলমের মাসহ ৯ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এর মনোনয়ন পত্র বাছাইয়ে বাতিল করা হয়েছে। একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণের জিম্মাদার হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়। ওই ঋণের জিম্মাদার হিসেবে তাকেও খেলাপি ঘোষণা দিয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এ সময় অবশ্য ওই ঋণের টাকা পরিশোধর একটি প্রমাণপত্র জাহাঙ্গীর আলম এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাখিল করে বাছাই কমিটির কাছে। তার আইনজীবী ও নানা যুক্তি তর্ক তুলে ধরেন। মনোনয়নপত্র বাতিলের পর জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আদালতে আপিল করার কথা জানান।
বাছাইয়ে বাতিল ঘোষণের পর তাৎক্ষণিকভাবে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এতে নিরপেক্ষতার প্রমাণ হয় না। আপনারা নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে সরে গেছেন। যেহেতু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাওনাদারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে। তারপরও আপনারা যে কাজটি করলেন তাতে আপনারা পক্ষপাতিত্ব করলেন। আপনারা নির্বাচনে নিরপেক্ষতার মধ্যে ছিলেন না বা এখনো নেই। আপনারা নিরপেক্ষতা থেকে সরে গেছেন। আমি অনুরোধ করবো আপনারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটা নিরপেক্ষভাবে করুন। জনগ্রহগনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটা করুন।
এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকার একটি কোরিয়ান মালিকানাধীন কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করতো। যেই কোম্পানিতে আমার কোন শেয়ার নেই, আমার কোন লাভ নেই, আমার কোন অংশগ্রহণ নেই। সেই কোম্পানির হাজার হাজার শ্রমিকদের বাঁচাতে শুধুমাত্র মানবিক কারণে আমার নিজের সম্পদও দিয়েছি। আমার সম্পদ দিয়ে কোরিয়ান মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। কোরিয়ান মালিকরা করোনা পরিস্থিতি এবং পরবর্তী রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সময় মতো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। কিন্তু গত ১২ এপ্রিল ও ১৭ই এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করেছে। সেই সকল ডকুমেন্টস ব্যাংকের প্রতিনিধির মাধ্যমে এবং আইনজীবের মাধ্যমে এখানে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাই মনে করছি, এখানকার নির্বাচন কর্মকর্তারা নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে সরে গেছে। কোন অদৃশ্য কারণে সরে গেছে তা আমি জানিনা। আমি উচ্চ আদালতে আপীল করব। এর ন্যায় বিচার চাই। আমি গাজীপুরের মানুষকে যেমন রক্ষা করতে চাই তেমনি সারা দেশবাসীর কাছে জানতে চাই আমি ন্যায়বিচারটা পেতে পারি কিনা? এজন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আমি চাই নির্বাচন কমিশনার জন্য স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে তাদের কাজটা যেন করেন। আমি অবশ্যই আপিলে যাব। আমি এর সর্বশেষ দেখব। আমি দেখব মিথ্যার জয় হয়- নাকি সত্যের জয় হয়। আমি রাষ্ট্র, সরকার, বিচার বিভাগ, ও নির্বাচন কমিশন সবার কাছে নিরপেক্ষতা আশা করছি। আমি নগরবাসীর মৌলিক অধিকার বাঁচানোর চেষ্টা করছি। সকলের সহযোগিতা চাই।
তবে বাছাই শেষে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন এর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি, আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হারুন অর রশিদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টি রাজু আহমেদ এর মনোনয়ন পত্রসহ ৯ জনের মেয়র পদে মনোনয়ন পত্র বৈধ বলে গণ্য হয়েছে। যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছেন তারা এ বাছাই প্রক্রিয়ায় কেমন কোন অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করছেন না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়, নির্বাচন কমিশনের বিষয়। নির্বাচন কমিশনের আইন, বিধি-বিধান, নিয়ম কানুন আছে। আমার মনে হয় সেই বিধি-বিধান পালন না হওয়ায় নির্বাচনের কমিশনের আইন-কানুন অনুযায়ী মনোনয়ন পত্রটি বাতিল হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে নিরপেক্ষভাবেই এখানে মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই হয়েছে।
রোববার সকালে নগরের রথখোলা এলাকার মমতাজ অডিটোরিয়ামে মনোনয়নপত্র বাছাই করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে বলেন, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা অন্যান্য সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তিনি একজন ঋণখেলাপি হিসেবে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। উনি একজন জামিনদাতা হিসেবে ঋণখেলাপি। সে কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া ৩০০ জন সমর্থনকারীর জায়গায় ২৩৯ জনের স্বাক্ষর দিয়ে মনোনয়নয়পত্র জমা দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী অলিউর রহমান এবং যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তারা আপিল করার সুযোগ পাবেন।
আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৮৯ এবং সংরক্ষিত নারী কনসিলার পদে ৮২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মে এবং ভোট গ্রহণ হবে ২৫ মে। সব ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহন করা হবে।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭২১, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪২ এবং হিজড়া ভোটার ১৮ জন।