‘রাতের ভোটের এমপি’ বলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে অব্যাহতি
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমানকে ‘রাতের ভোটের এমপি’ বলায় সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে দলীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) এ সিদ্ধান্ত নেয় পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন।
গণমাধ্যমকে কাজী আলমগীর হোসেন জানান, বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি শোকজের জবাবও দিয়েছেন। এসব কাগজপত্র আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাকে যেন বহিষ্কার করা না হয়। কিন্তু আমরা জটিলতা এড়ানোর জন্য জেলা কমিটির মিটিংয়ে সকলের সিদ্ধান্তের আলোকে তাকে দলের পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছি এবং ১নং সহ সভাপতি যিনি আছেন তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। আবার কেন্দ্র থেকে যদি নির্দেশ দেয় তাহলে আমরা তাকে স্বপদে ফিরিয়ে দেবো।’
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান জানান, ‘আমি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন চিঠি হাতে পাইনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর দেখছি।’
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার জানান, ‘উপজেলা সভাপতির যে বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সেটি এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় যা নিয়ে বাইরে কোথাও আমরা মিটিং পর্যন্ত করতে পারতেছিলাম না। যে কারণে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ তাকে শোকজ করেছে। কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক হয়নি। এরপর গত ২৩ মে সকল উপজেলার নেতাদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মাহাবুব তালুকদারকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হোক।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা রুমান হাসনাতের সঙ্গে মাহবুব তালুকদারের কথোপকথনের একটি অডিও কল রেকর্ড ভাইরাল হয়। ওই রেকর্ডের মধ্যে মাহবুব তালুকদারকে বলতে শোনা যায়, ‘বর্তমান এমপি মহিব রাতের ভোটে এমপি হইছে। তাকে শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেয়নি।’
এ সময় শ্রমিক লীগ নেতা রুমান হাসনাতকে হুমকি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করতে হলে আমার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে। মহিবকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেও, আবার আওয়ামী লীগ করতে চাও। তুই কেমনে আওয়ামী লীগ করোছ আমি দেখে নিব। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আমার বাবাও সভাপতি ছিলেন। আমি আর আমার বাপ আওয়ামী লীগার। অন্যরা সব রাজাকার।’
এমন বিতর্কিত মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূহুর্তেই ভাইরাল হওয়ায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্নবিদ্ধ হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এ ঘটনার প্রতিবাদে ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবের বহিষ্কার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন শুরু করে। এতে দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় জরুরি বৈঠকে বসে উপজেলা আওয়ামী লীগ। সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির রেজুলেশন পাঠানো হয় জেলা কমিটির কাছে।