তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রেসিডেন্টকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তাইওয়ান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, এ বিষয়ে নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি না।
তিনি বলেছেন, আমরা চীনের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে জড়াতে চাই না। সোমবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। খবর সিনহুয়া, বিবিসি, আল-জাজিরার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৈঠকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন মনে করেন নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সমুন্নত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের অবশ্যম্ভাবী দায়িত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং সারা বিশ্বের স্বার্থেই এ সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন।
ব্লিংকেন বলেন, বালিতে দুই প্রেসিডেন্ট যে ‘অ্যাজেন্ডা’ নির্ধারণ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সেই এজেন্ডায় ফিরে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সেগুলোর পাশেই রয়েছে। বাইডেনের এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে : যুক্তরাষ্ট্র শীতল যুদ্ধে জড়াতে চায় না; চীনের সিস্টেমে কোনো ধরনের পরিবর্তন চায় না; এর জোটের লক্ষ্য কখনোই চীন নয়; ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতায় এর সমর্থন নেই এবং চীনের সঙ্গে কোনো সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াতে আগ্রহী নয়। অর্থাৎ এক চীন নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান এখনো অটুট রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ অব্যাহত রাখার আশা করছে। যোগাযোগ, মতবিরোধ দূর করা, সংলাপ চালুসহ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দুপক্ষ কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, সারা বিশ্বে উন্নয়ন হচ্ছে আর সেই সঙ্গে সময়ও পালটাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বের প্রয়োজনে চীন-মাকিন সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দুপক্ষের জনগণেরই আরও উন্নত জীবনের প্রত্যাশা করার অধিকার রয়েছে। দুই দেশের সাধারণ স্বার্থকে মূল্যায়ন করা উচিত। প্রত্যেকের অগ্রগতি অন্যের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি একটি সুযোগ।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক দায়িত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে সারাবিশ্বের জনতার জন্য দুদেশের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত। এভাবেই বিশ্ব শান্তি এবং উন্নয়নে দুই দেশ ভূমিকা রাখতে পারে এবং বিশ্বকে সহযোগিতা করতে পারে।
শি জিনপিং বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে শ্রদ্ধা করে। সেখানে কোনো পরিবর্তন বা চ্যালেঞ্জ চীন চায় না। একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্রেরও চীনকে সম্মান করা উচিত। চীনের অধিকার এবং স্বার্থে আঘাত করে এমন কোনো কাজ তাদের করা উচিত নয়। বালিতে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছিলেন দুপক্ষেরই তাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত বলে শি জিনপিং উল্লেখ করেন।
তবে তাইওয়ান প্রণালিতে চীনের ‘উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানান। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের রাশিয়ার ‘আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ’সহ বিশ্বের নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে ব্লিংকেন বলেন, চীন রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দেবে না।
সম্প্রতি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য দেশকেও এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন।
তিনি বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিশ্রুতি, একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
চীনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে জিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকংয়ে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গভীর উদ্বেগের’ কথা তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন ব্লিংকেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে অর্থনৈতিকভাবে আটকে রাখতে চায় বলে জল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি চীনের জনগণকে আশ্বস্ত করছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এমনটি চায় না।
ব্লিংকেন বলেন, চীনের বৃহত্তর অর্থনৈতিক অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকেও লাভবান করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে চীনের নির্দিষ্ট কিছু প্রযুক্তির বিস্তার ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সম্পর্কে অস্থিরতা রয়েছে এবং এখানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে রোববার বেইজিংয়ে পৌঁছেই চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের সঙ্গে সাড়ে সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ওই বৈঠকে দুপক্ষের মধ্যে বেশ কিছু মতবিরোধ দূর হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বাড়ানোর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই দিনের চীন সফরের প্রেক্ষিতে আশা করা হচ্ছে এ বছরই কোনো এক সময়ে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন। দুপক্ষের মধ্যে এখনো অনেক বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমকর্তাদের মধ্যেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।