সিলেটের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের কৃতজ্ঞতা
সিলেটের অভাবনীয় উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিলেটের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্নের জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে। সিলেটবাসীর জন্য এটি অত্যন্ত খুশির বিষয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেনের কাজও শুরু হচ্ছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন, প্রায় শত বছর পরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আয়তন তিনগুণ বৃদ্ধি করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-সিলেট সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর ও সিলেটের রেললাইনের ডুয়েলগেজ নির্মাণের কাজটি তাড়াতাড়ি শুরু করলে অর্থনীতি আরও উপকৃত হবে।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে বন্যা হয়েছে। পানি আমাদের দেশের সম্পদ। এবারের বন্যা আমাদেরকে অন্যরকম শিক্ষা দিয়ে গেল। এখন থেকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করতে পারলে এটি ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে- উল্লেখ করে তিনি সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ সকল নদ-নদীর নাব্যতা সৃষ্টির জন্য ড্রেজিংসহ নদী তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকরণে গৃহীত প্রকল্পের কাজ যথাসময় বাস্তবায়নের আহবান জানান। ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করায় তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কেও ধন্যবাদ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘সিলেটে তিনি তারজঞ্জালবিহীন বৈদ্যুতিক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। যার ফলে সিলেট একটি সুন্দর নগর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটে প্রথম ডিজিটাল সিলেট সিটি তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এ কাজগুলো সম্পন্ন হয়নি, বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাব। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিভাগীয় শহরে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এই কর্তৃপক্ষগুলো পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার কাজ করে থাকে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সিলেটে এখনও এ ধরনের কোনো কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি হয়নি।’ তিনি সিলেটের জন্যেও এধরনের কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার অনুরোধ জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছুদিন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষা করে এই কারাগারটাকে বঙ্গবন্ধু পার্ক নির্মাণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আহ্বান জানান।
শিক্ষা ক্ষেত্রে সিলেট এখনও পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ড. মোমেন আহ্বান জানান। তিনি সিলেট এয়ারপোর্ট ও চৌকিদিঘীর চারিদিকে ৫ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করার জন্যেও অনুরোধ জানান।
সিলেটের কৃতি সন্তান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের বড় ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী আমার বড় ভাই মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিত-এর আকাঙ্খা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে সেটা বাস্তবায়নেরও অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিলেটের উন্নয়নের জন্য অনুমোদিত কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে সিলেটের জনগণের উপকার হবে এবং সেইসাথে সিলেটে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা আরও অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক হাওর-বাওর ও জলাশয়ের দেশ। এসব জনসাধারণের উপর নির্ভরশীল আমাদের কৃষি, জীবন, জীবিকা। তবে নদী সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প অনেক সময় হাতে নেয়া হয়, যাতে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হয়। এতে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, ঠিক তেমনি তৎসংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনীতিতেও বিরুপ প্রভাব পড়ে।’ এজন্য তিনি নদী বা জলাধার সংক্রান্ত প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে আরো সচেতন থাকার আহবান জানান।
বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে নানাক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত ও টেকসই করে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর জোর দিচ্ছে যাতে কোনো ধরনের উন্মাদনা বা সন্ত্রাসী তৎপরতা অথবা আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতার কারণে রাষ্ট্রীয় ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত না হয়।’
বিভিন্ন গোষ্ঠী দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংসের জন্যে বহুবিধ উদ্যোগ নিয়েছে, এব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত দেশ স্থিতিশীল সে সমস্ত দেশের জনগণ সুখে আছে। আর যে সমস্ত দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে যেমন আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং তাদের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে