ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনার ঘন্টা খানেক পর আবার স্থগিত, টাকা ফেরতের দাবী পদ বঞ্চিতদের
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি মো: সাইফুল ইসলামকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পায়নি ফয়জুল ইসলাম আশিক তালুকদার। এরপর টাকা ফেরত চেয়ে না পেয়ে সে তার ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করেন জেলা ছাত্রলীগের, যেখানে লেখেন ’টাকা গুলো দয়া করে ফেরত দেন। নইলে গনভবনে যাবো বাকী ডকুমেন্ট নিয়া।’
এছাড়া পদ প্রত্যাশী আশিকের সাথে জেলা সভাপতির টাকা সংগ্রহ করার নির্দেশনার অডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এভাবেই ধীরে ধীরে ফাঁস হতে থাকে উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের প্রায় কোটি টাকা বানিজ্যের তথ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ পৌর শহরে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় কমিটি ঘোষনার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে সদ্য ঘোষিত ছাত্রলীগ কলাপাড়া উপজেলা শাখা, কলাপাড়া পৌর শাখা ও
সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজ শাখা কমিটি সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দেয়া হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারন সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত ১০ জুলাই তারিখের এক প্রেসনোটে কমিটি স্থগিতের এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে ১০ জুলাই সোমবার রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মো: তানভির হাসান আরিফ স্বাক্ষরিত এক প্রেসনোটে হাসিবুল হাসানকে সভাপতি ও মো: তারিকুল ইসলাম বাবু তালুকদারকে সম্পাদক করে ছাত্রলীগ কলাপাড়া উপজেলা শাখা কমিটি, রাকিবুল হাসান রাব্বিকে সভাপতি ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সম্পাদক করে কলাপাড়া পৌর শাখা কমিটি ও জসিম উদ্দীন জেতুকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান মুসাকে সম্পাদক করে সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজ শাখা কমিটি ঘোষনার পর পর রাতেই শহরে টাকা ফেরতের দাবী তুলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পদ বঞ্চিত নেতা কর্মীরা।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের প্রায় কোটি টাকার মিশন সফল করতে ২০ এপ্রিল ২০২৩ উপজেলা ছাত্রলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় শেখ কামাল স্মৃতি কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে। সভা শেষে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে পদ প্রত্যাশীদের জেলায় বায়ো ডাটা জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় পদ প্রত্যাশীদের দৌড় ঝাপ। জেলা ও কেন্দ্র ম্যানেজ করে উপজেলা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ন পদ পেতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নামে একাধিক বিএনপি পরিবারের সদস্য। যাদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন পদে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যাদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক নেতা কর্মী। তাদের সাথে চলে দরকষাকষি। জগবন্ধুর মিষ্টি, দধি, কোড়াল মাছ, মধু সহ উপঢৌকন দেয়া শুরু হয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের বাসায় বাসায়। পরবর্তীতে সভাপতি, সম্পাদক পদের নিলাম ওঠে। এতে
পদ প্রত্যাশীরা মোটা অংকের টাকা দিলেও সর্বোচ্চ দর দাতার নাম অন্তর্ভূক্ত হয় জেলা ঘোষিত কমিটিতে। যদিও বিএনপি পরিবার থেকে মোটা অংকের মিশন নিয়ে মাঠে নামার তথ্য কেন্দ্রে লিখিত ভাবে জানানো হয় কমিটি ঘোষনার আগেই।
উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সম্পাদক ও সভাপতির পদ বঞ্চিত ফয়জুল ইসলাম আশিক তালুকদার বলেন, ’আমি আমার বাবার জমি বিক্রীর ১৫ লাখ টাকা দিয়েছি জেলা সভাপতি সাইফুল ভাইকে। ১৫ লাখ টাকা দিয়েও পদ না পাওয়ায় টাকা ফেরত চাওয়ায় তার সহযোগী সুজন ভাইকে দিয়ে আমাকে থ্রেট করিয়েছে। আমার চেয়েও দ্বিগুন নিয়ে তারা কমিটি দিয়েছে। আমি আমার বাবার জমি বিক্রীর টাকা ফেরত না পেলে গনভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাবো।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম টাকা লেন দেনের অভিযোগ অস্বীকার করে গনমাধ্যমকে বলেন, ’এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেউ এরকম অভিযোগ দিলে তাকে প্রমান দিতে হবে। প্রমান ছাড়া কোন কিছু বলা যুক্তিসঙ্গত হবে না।’ তবে কমিটি ঘোষনার পর পরই কেন্দ্র থেকে স্থগিত করে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কি কারনে কেন্দ্র থেকে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে জানতে পারিনি। কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের অভিভাবক। তাদের সকল সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’