নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে যা জানতে চাইলেন উজরা জেয়া

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক ও মানবাধিকারকর্মীদের আইনি সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে আমেরিকান ক্লাবে দেশের নাগরিক সমাজ, শ্রমিক সংগঠন ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব বিষয়ে জানতে চান।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে বৈঠকে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি–বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক ও টেলিভিশন টক শো তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন এবং বেসরকারি সংস্থা সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এ কে এম নাসিম। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উজরা জেয়া বাংলাদেশের অধিকারকর্মীদের কাজের পরিবেশ এবং সমস্যা সম্পর্কে জানতে চান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যেসব বিতর্ক ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে, তা যারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দেবে, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। যারা একটি ভালো নির্বাচনের পক্ষে বা জন্য কাজ করছে, তাদের তো ভয়ের কিছু নেই।

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকারের উন্নয়ন বয়ানের বিরোধিতা করাকে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিরোধিতা হিসেবে বলা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনাও নয়, বরং কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পের সমালোচনা করা হলেও তা সরকারের সমালোচনা হিসেবে দেখা হয়। কিছু কিছু বিষয়ে এ ধরনের সংবেদনশীল আচরণ দেশের অধিকারকর্মীদের কাজের পথে বাধা তৈরি করছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ এবং এর ফলে গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের পথে কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তা তুলে ধরেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটি সংশোধনের কথা বলছেন। কিন্তু সরকার চাইলে তো এখনই তা করতে পারে। এত সময় নেওয়ার কী দরকার, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

দেশে আইনের শাসন ও অন্যান্য বিষয়ে অনেক সমস্যার সমাধান একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন জিল্লুর রহমান।

গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য একটি পোশাক কারখানায় গিয়ে খুন হন শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা তাঁদের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। দেশের বেশির ভাগ শ্রমিক সংগঠন মালিকপক্ষের তৈরি করা এবং সেগুলো ‘হলুদ সংগঠন’ হিসেবে মালিকদের স্বার্থের পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শ্রমিকেরা তাঁদের অধিকারের বিষয়গুলো তুলে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিয়ে এ কে এম নাসিম বলেন, শ্রমিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন করলে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়। তাঁরা সরকারের শ্রম বিভাগের কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে চার–পাঁচ বছর লেগে যায়।


শেয়ার করুন

Similar Posts