প্রথমবারের মত আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
প্রথমবারের মত আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষীক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়সহ হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। তৃতীয়বার মোকাবেলায় আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা।
রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। প্রথম ম্যাচ ২ উইকেটে জিতেছিলো টাইগাররা। এতে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে ভারতের মাটিতে প্রথম দ্বিপাক্ষীক সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলো বাংলাদেশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশের মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়। তৃতীয় দ্বিপাক্ষীয় লড়াইয়ে এসে প্রথম সিরিজে জয়ের স্বাদ পেলো সাকিবের দল।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে বৃষ্টির কারনে নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৬ রান করে আফগানিস্তান। বৃষ্টি আইনে ১৭ ওভারে ১১৯ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। ৫ বল বাকী থাকতে ৪ উইকেটে ১১৯ রান করে ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে সাকিব-লিটনরা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আজও প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বল হাতে প্রথম ওভারে আক্রমনে এসেই উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারার পর পঞ্চম ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে তাসকিনকে ফিরতি ক্যাচ দেন আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৫ বলে ৮ রান করেন গুরবাজ।
গুরবাজকে শিকার করে ৫৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫০তম উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান।
নিজের তৃতীয় ওভারে আফগানিস্তানের আরেক ওপেনার হজরতুল্লাহ জাজাইকে ৪ রানে বিদায় দেন তাসকিন। ১৬ রানেই ২ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। এ অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন ইব্রাহিম জাদরান ও মোহাম্মদ নবি। মুস্তাফিজের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ২টি চারে ১৩ রান তুলেন ইব্রাহিম ও নবি। ৬ ওভার শেষে ৩৪ রান পায় আফগানিস্তান।
৭ দশমিক ২ ওভারের পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। ৯৯ মিনিট খেলা বন্ধ থাকলে ১৭ ওভারে নামিয়ে আনা হয় ম্যাচটি।
বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে নাসুম আহমেদের করা নবম ওভারে নবির ক্যাচ ফেলেন সাকিব ও লিটন। দু’বার জীবন পেয়েও বেশি দূর যেতে পারেননি নবি। ১০ম ওভারে উইকেটের পেছনে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে মুস্তাফিজের শিকার হন ২২ বলে ১৬ রান করা নবি।
পরের ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব। প্রথম বলে আফিফের ক্যাচে ইব্রাহিমকে ২২ রানে ও শেষ বলে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ৫ রানে বোল্ড করেন সাকিব।
৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আফগানিস্তানের রানা চাকা সচল করেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই ও করিম জানাত। ষষ্ঠ উইকেটে ২৯ বলে ৪২ রান যোগ করে দলের রান ১শ পার করেন তারা। হাসান ও তাসকিনের করা যথাক্রমে ১৩তম ওভারে ১৬, ১৪তম ওভারে ১২ তুলেন তারা। ১৬তম ওভারে ওমরজাইকে শিকার করেন মুস্তাফিজ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১ বলে ২৫ রান করেন ওমরজাই।
১৭তম ওভারে জানাতকে থামান তাসকিন। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ বলে ২০ রান করেন জানাত। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন অধিনায়ক রশিদ খান। শেষ পর্যন্ত ১৭ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৬ রান করে আফগানিস্তান। রশিদ ৩ বলে অপরাজিত ৬ ও মুজিব ১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের তাসকিন ৩৩ রানে ৩টি, সাকিব ১৫ ও মুস্তাফিজ ৩০ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
বৃষ্টি আইনে ১৭ ওভারে ১১৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও আফিফ হোসেন। শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজে ছিলেন লিটন। আফগানিস্তানের দুই পেসার ফজলহক ফারুকির প্রথম ওভারে ২টি ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ওয়াফাদার মোমান্দের দ্বিতীয় ওভারে পরপর ৩টি চার মারেন লিটন।
পঞ্চম ওভারে স্পিনার মুজিবের বলে ছক্কা মেরে বলকে প্রথমবারের মত সীমানার বাইরে পাঠান আফিফ। পাওয়ার প্লের ৫ ওভার শেষে ৫০ রান তুলে বাংলাদেশ। এ নিয়ে শেষ ৬ টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে ৫০ রান স্পর্শ করলো।
পাওয়ার প্লে শেষ হবার পর বাংলাদেশের রানের গতি কমে যায়। ষষ্ঠ থেকে নবম ওভার পর্যন্ত, চার ওভারে মাত্র ১টি ছক্কায় ১৭ রান তুলেন লিটন ও আফিফ।
দশম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে লিটন-আফিফের ৬৭ রানের জুটি ভাঙ্গেন মুজিব। একই ওভারে দু’জনকে শিকার করেন তিনি। ৬টি চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন লিটন। ২টি ছক্কায় ২০ বলে ২৪ রান করেন আফিফ।
পরের ওভারে ওমারজাইর শিকার হয়ে ৪ রানে থামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এতে ১১তম ওভারে ৭৬ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান আগের ম্যাচের হিরো তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১৫তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১শ রানে পা রাখে বাংলাদেশ। ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কার মারার পর ওমরজাইর বলে আউট হন হৃদয়। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ১৯ রান করেন তিনি । সাকিবের সাথে জুটিতে ২১ বলে ৩১ রান তুলেন হৃদয়।
হৃদয় ফেরার পর শেষ ২ ওভারে ১০ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। ১৬তম ওভারে আসে ৬ রান। শেষ ওভারে ৪ রানের দরকারে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন শামিম হোসেন। ১টি করে চার-ছক্কায় ১১ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন ম্যাচ ও সিরিজ সেরা সাকিব। ৭ রানে অপরাজিত থাকেন শামিম। আফগানিস্তানের মুজিব ও ওমারজাই ২টি করে উইকেট নেন।
এই সিরিজে একমাত্র টেস্ট রেকর্ড ৫৪৬ রানে জিতলেও, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে হারের বদলা টি-টোয়েন্টিতে নিলো বাংলাদেশ। এ বছর ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো টাইগাররা।
স্কোর কার্ড :
আফগানিস্তান ইনিংস :
গুরবাজ ক এন্ড ব তাসকিন ৮
জাজাই ক লিটন ব তাসকিন ৪
ইব্রাহিম ক আফিফ ব সাকিব ২২
নবি ক লিটন ব মুস্তাফিজ ১৬
নাজিবুল্লাহ বোল্ড সাকিব ৫
ওমারজাই ক শামিম ব মুস্তাফিজ ২৫
জানাত ক শান্ত ব তাসকিন ২০
রশিদ অপরাজিত ৬
মুজিব অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-৬) ৯
মোট (৭ উইকেট, ১৭ ওভার) ১১৬
উইকেট পতন : ১/৯ (গুরবাজ), ২/১৬ (জাজাই), ৩/৪৮ (নবি), ৪/৬২ (ইব্রাহিম), ৫/৬৭ (নাজিবুল্লাহ), ৬/১০৯ (ওমারজাই), ৭/১০৯ (জানাত)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৪-০-৩৩-৩ (ও-২),
হাসান : ৩-০-২০-০ (ও-২),
নাসুম : ৪-০-১৫-০,
মুস্তাফিজ : ৩-০-৩০-২ (ও-২),
সাকিব : ৩-০-১৫-২।
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস ক রশিদ ব মুজিব ৩৫
আফিফ ক জানাত ব মুজিব ২৪
নাজমুল হোসেন বোল্ড ব ওমারজাই ৪
তাওহিদ হৃদয় অপরাজিত ৪৭
সাকিব অপরাজিত ১৮
শামিম হোসেন অপরাজিত ৭
অতিরিক্ত (বা-৫, লে বা-১, ও-৬) ১২
মোট (৪ উইকেট, ১৬.১ ওভার) ১১৯
উইকেট পতন : ১/৬৭ (লিটন), ২/৬৮ (আফিফ), ৩/৭৬ (শান্ত), ৪/১০৭ (হৃদয়)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফারুকি : ৩-০-১৯-১ (ও-১),
মোমান্দ : ২.১-০-৩০-১ (ও-১২,
মুজিব : ৪-০-২৮-২ (ও-২),
রশিদ : ৪-০-১৯-০,
ওমরজাই : ৩-০-১৭-১ (ও-১)।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।