নির্বাচন পরিস্থিতি নজরে রাখছে ইইউ

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর পরিস্থিতি নজরে রাখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। এ সময় তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তথা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আকাক্সক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে মানবাধিকারের অবস্থান রয়েছে জানিয়ে গিলমোর বলেন, আমরা যে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ইউরোপের ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইইউ’র মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ ওই দূত বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর শেষ করেছে। তারা ব্রাসেলসে ফিরেছ। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তারা একটি বিস্তৃত রিপোর্ট প্রস্তুত করছে, যা ২৭শে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এবং হাই রিপ্রেজেনটেটিভের কাছে পাঠানো হবে। ওই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি-না?

ইইউ দূত খোলাসা করেই বলেন, নির্বাচন মানে ভোটের দিনের পরিবেশ নয়। বরং তার আগে এবং পরে মাসগুলোতে কী ঘটছে অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশের জন্য তা কতটা সহায়ক তা বিবেচ্য।

অর্থনৈতিক অধিকার, ব্যবসা ও মানবাধিকারের প্রতি নজর দিতে যাচ্ছে ইইউ: এদিকে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অধিকার, ব্যবসা ও মানবাধিকারের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নজর দিতে যাচ্ছে উল্লেখ করে ইইউ’র মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর আরও বলেন, ভোক্তারা এখন অনেক বেশি সতর্ক। তাদের পণ্য কোথা থেকে এসেছে, সেখানে সরবরাহ ব্যবস্থায় কী ঘটছে, তা-ও তারা জানতে চাচ্ছে।

একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত। ইইউ দূত বলেন, আমরা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। আমি মনে করি, আমরা একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করছি, এখন কীভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দেবো।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা জানে ইইউ- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী: এদিকে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়স খুব বেশি দিনের নয় এবং এর ‘সীমাবদ্ধতা’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নেতৃত্ব ভালো করে জানেন ও বোঝেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরকে পাশে নিয়ে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। তবে নির্বাচন কীভাবে হবে, আর কোনো দল অংশ নেবে কি না সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

কেননা কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইইউ প্রাক-নির্বাচনী মিশন বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ ছিল। আমি জানতে পেরেছি তারা প্রায় ৭৫টি বৈঠক করেছে এবং এরমধ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ আরও অনেকে রয়েছে। আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে যে বলিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেটির ওপর নির্ভর করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

গুম-খুন কমেছে, ইইউ দূতকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় আছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

মঙ্গলবার ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। এর আগে, ঢাকা সফররত ইইউ’র মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের নেতৃৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল গুম-খুন বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তাদের জানিয়েছি ইউএস স্টেট বিভাগের তথ্যমতে ২০০৪, ০৫, ০৬ এ-৪৫০ জন গুম ছিল। গুমগুলোর বেশির ভাগই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল। ৭৬ জনের গুমের কথা বলা হয়েছিল, তারমধ্যে ২৭ জনের খবর জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। সবকিছুতে সন্তোষ জানিয়েছে তারা।

মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইইউ: গিলমোর

ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের।

মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইইউ’র মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। পরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

গিলমোর বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক অনেক ভালো। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে আমরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছি। তারা সরকারি পর্যায়ে কথা বলবে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই ঘুরে গেছে; তারা শিগগিরই রিপোর্ট দেবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গুম এসব বিষয় নিয়েই মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। এসব ঘটনা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট করে। নির্বাচন নিয়ে তেমন কিছু আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনে এমন কিছু করা যাবে না যাতে আমাদের দেশের ইমেজ খারাপ হয়। এ বৈঠকে গিলমোরের সঙ্গে ছিলেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভিলিক। বৈঠকে অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত এইচ ই চার্লস হোয়াইটলিসহ চার সদস্যের প্রতিনিধিদল।


শেয়ার করুন

Similar Posts