৬ টি খালে বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালী নেতার মাছ চাষ, ভয়ে মুখ খুলছে না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের ৬ টি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা । গত ৪৫ বছর ধরে এসব খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি নিষ্কাশনসহ নানা কারণে হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। কেননা এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করে, সংশ্লিষ্ট ভূমি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েও প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এরপরও নিরুপায় কৃষক বর্তমান আমন চাষাবাদ মৌসুমে কৃষি জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় প্রতিকার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মহিপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের কৃষক মো.আব্দুল মন্নান।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, মহিপুর ইউনিয়নের মূলামের জোয়ার-ভাটা প্রবহমান খালের শাখা, লতিফপুর মাদবার বাড়ি সংলগ্ন খাল, নিজশিববাড়িয়া খাল, লতিফপুর ওয়াকফ এর খাল, মোয়াজ্জেমপুর আব্দুল হক বাড়ির সংলগ্ন ওয়াকফ এর খাল এবং লতিফপুর ইন্নারজমার দুইটি খালসহ ৬ টি খালে বাঁধ দিয়ে গত ৪৫ বছর ধরে মাছ চাষ করছেন মহিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম আকন ও তার ছেলে মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি নাহিদ আকন। এ কারনে এসব খাল থেকে শুস্ক মৌসুমে কৃষি কাজে কৃষকরা পানি ব্যবহার করতে পারে না এবং বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নাহিদ আকন স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নামে রয়েছে একাধিক মামলা। মহিপুরের জুয়া ও মাদক সিন্ডিকেটের নেতা তিনি। সাধারণ মানুষ সর্বদা তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে থাকে। তার কর্মকান্ডে কেউ প্রতিবাদ করলে নাহিদ আকন নিজেই তাদের মারধর পর্যন্ত করে থাকেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আব্দুল মন্নান বলেন,‘ আমরা সাধারণ মানুষ খালের ধারে কাছেও যাইতে পারি না নাহিদ আকনের ভয়ে। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে নাহিদ আকন বলেন,‘এসব খাল আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। আর তারা যে অভিযোগ করছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, আন্ধারমানিক নদী ও শিববাড়িয়া নদীর সঙ্গে স্লুইস গেটের মাধ্যমে সংযুক্ত মুলাম খাল। এ খালের পানির ওপর নির্ভর করে চলে এ এলাকার কৃষকদের চাষাবাদ। অথচ এসব খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা সালাম আকন ও তার পুত্র শ্রমিক লীগ নেতা নাহিদ আকন। খালের বাঁধের উপর নির্মান করেছেন তারা মাছ পাহাড়াদারের ঘর। এতে বর্ষা মৌসুমী চাষের জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
লতিফপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম দুয়ারী বলেন,‘তাদের জোর আছে, ক্ষমতা আছে। তারা মাটি দিয়া আটকাইয়া খাল খায়। আমরা তো আর কিছু কইতে পারি না।’
এ ব্যাপারে মহিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল মালেক আকন বলেন,‘ বহুবার চেষ্টা করেছি এই খাল গুলো উন্মুক্ত করার কিন্তু পারিনি। গ্রামবাসী অসহায় তাদের কাছে। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, স্থানীয়দের সুবিধার্থে হলেও খাল খাল গুলো উন্মুক্ত করার।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম আকন বলেন,‘আমি শুধু লতিফপুর ওয়াকফ এর একটি খালে মাছ চাষ করি, আমি এটা কিছু অংশ ডাকে নিছি।’
সালাম আকন আরও বলেন,’আমার ছেলে যে খালে মাছ চাষ করে সেটা রেকর্ডীয় সম্পত্তি। এছাড়া মুলামের খাল উন্মুক্ত আছে।’
মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন,‘প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই, এছাড়া এসব খালের দুই পাড়ের সুফলভোগীরা মাছ আহরণ ও পানি ব্যবহার করবে। যদি কেউ জোর জবরদস্তি করে আটকে রাখে সেটা বে-আইনী।’
কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কৌশিক আহম্মেদ বলেন,‘খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতুবুল আলম বলেন,‘ খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, এটা কোনো ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি ইউএনও কে খোঁজ নিতে বলছি।’