সংবিধান সংরক্ষণ করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব : প্রধান বিচারপতি

শেয়ার করুন

নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশের জন্য পবিত্র সংবিধান তৈরি হয়েছে। এই সংবিধানের সংরক্ষণ করা প্রত্যেকের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা সেভাবেই শপথ নিয়েছি।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে বীর শহিদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান বিচারপতি এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে তিনি স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, স্মৃতিসৌধ আমাদের শহিদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্মিত হয়েছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এখানে এসেছি শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এ দেশের সংবিধান তৈরি হয়েছে। এই সংবিধানকে সংরক্ষণ করা আমি ও আমার সহকর্মীদের প্রত্যেকের পবিত্র দায়িত্ব।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে শাহাদৎবরণকারী সব শহিদদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ৩০ লাখ শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। শ্রদ্ধা জানাই দুই লাখ মা-বোনের প্রতি। জাতীয় স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করছি, যে মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতিগুলো আমি বাংলাদেশর প্রধান বিচারপতি হিসেবে ও ব্যক্তি জীবনে দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করব।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, বীর শহিদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ও এর সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের পক্ষ থেকে সব শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

এর আগে, বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ওবায়দুল হাসানকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গত ১২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর দায়িত্বপালনের সময়সীমা ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তিনি ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন। তার বাবা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। তার অনুজ সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোণা-৪ আসনের সংসদ সদস্য। সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ শাফকাত হাসান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডারহাম থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (অর্থনীতি) ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বারের সনদ পেয়ে জেলা বার-কমিটি যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী এটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ : একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

বিচারপতি হিসেবে যোগদানের আগে ওবায়দুল হাসান দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং সাংবিধানিক বিষয়াদি সম্পর্কিত মোকদ্দমার একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধানমন্ডি ল’ কলেজের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


শেয়ার করুন

Similar Posts