কলাপাড়ায় আ’লীগের মনোনয়ন নিয়ে দু’ভাইয়ের দ্বন্দ্ব
পটুয়াখালী-৪ নির্বাচনী এলাকায় এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইছেন একই পরিবারের দুই সহোদর ভাই। এতে তাঁদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও দলের অনুসারী নেতা-কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। কোন উদ্যোগই তাঁদের একীভূত করতে না পারায় তাঁদের দ্বন্দ্ব এখন চরমে।
এদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: মাহবুবুর রহমান। যিনি অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এবং নবম সংসদের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিঁনি ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে গঙ্গামতি নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলে টেন্ডারবাজি, জমি দখল করে রাতারাতি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হন ।
এতে দুদক মাহবুব ও তাঁর স্ত্রী প্রীতি হায়দার উভয়ের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে এবং দু’জনকেই অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে। এছাড়া খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ১০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাত, সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
অপরদিকে একই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইছেন মাহবুবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মো: হাবিবুর রহমান মিলন। তিঁনি সাবেক এনএসআই, সাবেক এসএসএফ পরিচালক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিঁনি যখন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইছেন তখন বেঁকে বসেছে মাহবুব। এতে দু’ভাইয়ের কোন্দল এখন শহরে টক অব দ্য টাউন।
সূত্র জানায়, কলাপাড়া উপজেলার দুইটি পৌরসভা, ১২টি ইউনিয়ন এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ১১৪ পটুয়াখালী-৪ আসন। এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে কলাপাড়ায় এক লাখ ৯৯ হাজার ৪৫৫ জন। আর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮৮ হাজার ৮৮৬ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৬৭ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৪ জন। দক্ষিনাঞ্চলের এ জনপদে আওয়ামীলীগ সরকার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দেশের উন্নয়ন ও সৃমদ্ধিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। বিএনপি শাসনামলেও নৌকা বিজয়ী হয়েছে এ নির্বাচনী এলাকায়। তবে স্বৈরাচার এরশাদ শাসনামলে ভোটবাক্স ছিনিয়ে নিয়ে এমপি হন জাপা প্রার্থী।
এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ৯০ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এ আসনে। চারদলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন ৬০ হাজার ১২ ভোট। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রার্থী। ২০১৮ সালে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান। তিঁনি এমপি হওয়ার পর এ জনপদের সকল নদী, খাল, স্লুইজ, কালভার্ট কৃষকের জন্য উম্মুক্ত করেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, শালিশ বানিজ্য মুক্ত করেন এ জনপদকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ করোনাকালে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, কখনও ভ্যানে কখনও ডিঙি নৌকায় চড়ে কাঁদা পানিতে নেমে দু:স্থ মানুষের বাড়ী বাড়ী তাঁর খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া ছিল প্রশংসনীয়। তিঁনি এবারও দলের মনোনয়ন চাইছেন এ আসন থেকে। এবং মনোনয়ন যুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে জানায় দলীয় সূত্র।
এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে বিএনপি’র একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাত পাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি হাবিবুর রহমান। জাসদ (ইনু) মশাল মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন সাংবাদিক বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু এবং জাপা (এ) প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে আমজাদ হোসেন হাওলাদারের।
আলো/এসএ।