২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু
বহুল প্রতিক্ষীত দ্বদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় দেশজুড়ে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের সারিবদ্ধ হয়ে ভোট দিতে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তবে শীতের দিন হওয়ায় এখনও ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ধানমন্ডির ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে প্রথম ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরেই ভোট দেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৯৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৫৩৫ জন। এর বাইরে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে। দলটির মোট ২৬৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন। এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন। এ ছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর বাহিরে যে দলগুলো ভোটে অংশ নিচ্ছে সবগুলো দলের প্রার্থী এক শ’র নিচে। সবচেয়ে কম প্রার্থী রয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম-লীগ এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) এর। দুটি দল থেকে চার জন করে প্রার্থী রয়েছেন।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে থাকছে র্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এপিবিএনের সাড়ে সাত লাখ ফোর্স। ভোটের আগে-পরে ১৩ দিন থাকছে সেনাবাহিনী। গত ৩ জানুয়ারি থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে বাহিনীটির বিপুল সংখ্যক সদস্য। এবার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের বাড়তি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন ঘিরে যেকোনো অনিয়মের তাৎক্ষণিক বিচার করতে মাঠে রয়েছে ৬৫৩ জন বিচারিক হাকিম। ভোট দানে বাধা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর কর্মকর্তারা।
র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও কিছু দল নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। কেউ ভোট দিতেও পারে, নাও পারে। তবে কেউ ভোট দিতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া বেআইনি। এই কাজ যারা করবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২২৭ জন বিদেশি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে মোট ১২৬ জন বিদেশিকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে কমিশন। ৩৪ দেশের এসব বিদেশি পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি ওআইসি, সার্ক, ফেমবোসা ও কমনওয়েলথের মতো সংস্থাগুলোও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। ইসির অনুমোদন পাওয়া তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, ভারত, পোল্যান্ড, ফিলিস্তিন, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, জর্ডান, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটানের নাগরিক রয়েছেন। এবার ৭৬ জন বিদেশি সাংবাদিক নির্বাচনের দিন সংবাদ সংগ্রহের জন্য মাঠে থাকবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভাষণে তিনি জাল ভোটসহ যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সিইসি বলেন, সব প্রার্থী ও ভোটারদের নির্বাচনী বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকেও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো প্রকার অসততা, ব্যত্যয় ও অবহেলা সহ্য করা হবে না। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই বা পেশীশক্তির ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থিতা বাতিল ও প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নিচ্ছে। সর্বমোট ১৯৭১ জন প্রার্থী ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় বলে আখ্যায়িত করা যাবে না।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৭ জন ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৪৮ জন। নওগাঁ-২ আসনের একজন বৈধ প্রার্থী মারা যাওয়ায় আসনটির ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ২৯৯টি আসনে ভোট হবে।