আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি ইটভাটায়!হুমকিতে ৩০ হাজার মানুষ
আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের এনবিএম ইটভাটার ভাড়াটিয়া মালিক নুর উদ্দিন ও তার লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রনের বাঁধের পাশের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাঁধটি নরবড়ে ও ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রাকৃতিক জ্বলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে ওই ইউনিয়নের ফসলী জমি, প্রাণীকুল ও অন্তত ৩০ হাজার মানুষ দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়বে। দ্রæত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ইটভাটার মালিক নুর উদ্দিন বলেন, পত্রিকায় লিখলে কি হয়? তা আমার জানা আছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়ে ইটভাটা চালাই। প্রশাসন ম্যানেজ থাকলে কেউ কিছু করতে পারে না। আপনারা লেখেন দেখি তাতে কি হয়?
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ও লোকালয়ে ২০১৩ সালে এনবিএম নামের একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। ওই ইটভাটা সংলগ্ন পশ্চিম পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ওই বাঁধের কান্টি সাইটের মাটি কেটে ভাটার মালিক নুর উদ্দিন ও তার লোকজন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক জ্বলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে ওই ইউনিয়নের ফসলী জমি, প্রাণীকুল ও অন্তত ৩০ হাজার মানুষ দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়াও ওই ইটভাটা সংলগ্ন তিনপাশে গ্রামাঞ্চল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ইটভাটার ধোয়ায় পরিবেশ চরম আকারে বিঘ্নিত হচ্ছে। ধোয়ায় এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা শাস কষ্ট, হাপানি রোধে ভুগছেন। কিন্তু ইটভাটার মালিক প্রভাবশালী নুর উদ্দিন ও তার লোকজনের কারনে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। এলাকাবাসী বাঁধ কাটার প্রতিবাদ করায় নুর উদ্দিন ও তার লোকজন তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর হুমকি দিচ্ছে। মামলার ভয়ে তারা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। দ্রæত এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ জুড়েই ওই ইটভাটার কর্মজজ্ঞ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপরে ইটভাটার মাটি, কয়লা, পাকা ইট ও কাঁচা ইট রাখা হয়েছে। আরেক পাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কান্টি সাইটের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাঁধটি অত্যান্ত নড়বড়ে ও ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাকৃতিক জ্বলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
ইটভাটার পাশে বসবাসরত ঝড়না ও আসমাসহ কয়েকজন বলেন, বাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেছে। এতে বাঁধটি অত্যান্ত নড়বড়ে। বন্যা হলে ওই বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে এলাকা তলিয়ে যাবে। তারা আরো বলেন, ওই ইটভাটার কারনে আমরা অত্যান্ত ঝুঁকিতে বসবাস করছি। ধোয়ায় শিশুরা শাস কষ্ট ও হাপানিতে ভুগছে। গাছপালা ও ঘর বাড়ী ইটভাটার ধুলোয় একাকার হয়ে গেছে। দ্রæত এই ইটভাটা বন্ধে করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, বাঁধ কাটতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু ভাটার মালিক নুর উদ্দিন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ইটভাটা প্রস্তুত আইন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সকল বিধি লঙ্ঘণ করে এনবিএম ভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ইঠভাটা সংলগ্ন ৫০ গজ দুরে তিনদিকে গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এক পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে । ইটভাটার কর্তৃপক্ষ ওই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কান্টি সাইটের মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে গেছে। এতে বাঁধটি অত্যান্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের উপ-পরিচালক এইচএম রাশেদ বলেন, লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ইটভাটা নির্মাণ করায় এনবিএম নামের ওই ইটভাটার ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান সুজন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। দ্রæত পরিদর্শন করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আলোর ঠিকানা/ জে এইচ।