মিয়ানমারের ৫৮ জন সীমান্তরক্ষীর বাংলাদেশে আশ্রয়
সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়ার পর চৌকি ছেড়ে পালিয়ে এ পর্যন্ত দেশটির আধাসামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)’র অন্তত ৫৮ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এক উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোর থেকে এ পর্যন্ত ৫৮ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছে এবং রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ’
তিনি আরও জানান, আধা-সামরিক বাহিনীর সৈন্যদের কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র বিজিবি’র অস্ত্রাগারে জমা রাখা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, অনেক সৈন্য যুদ্ধের ইউনিফর্ম পরে এবং অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে এসেছে এবং অন্যরা অস্ত্র ফেলে সাদা পোশাকে মূল ভূখন্ডে ফিরে গেছে।
বাসস সর্বশেষ যে ছবি পেয়েছে তাতে সাদা পোশাকে খালি পায়ে রাইফেল বহনরত একজন ও ইউনিফর্ম পরা অপর ১৪ জন বিজিপি সদস্যকে দেখা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিজিবি মিয়ানমারের বিজিপিকে এই সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছে।’
এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষ বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সম্মুখসারিকে প্রভাবিত করছে বলে ঢাকা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘাত প্রশমনে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমার অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধের শব্দ শোনা গেলে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তাই আমরা বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ আশা করেছি।’
এর আগে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে ১৪ জন বিজিপি সদস্য ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে ভোরের দিকে সীমান্ত অতিক্রম করে বিজিবি’র কাছে আশ্রয় নিয়েছে।
ঢাকায় বিজিবি’র একজন মুখপাত্র পরে সাংবাদিকদের এই বিষয়ে একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং হয়নি।
সীমান্তের ওপারে বন্দুকযুদ্ধ চলায় বাংলাদেশ ভূখ-ে ছুটে আসা লক্ষ্যভ্রষ্ট মর্টার শেল বা বুলেটের ভয়ে সীমান্তবর্তী বান্দরবান জেলা প্রশাসন পাঁচটি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে।
বিজিবি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির ভেতরে থাকতে বা সাবধানে চলাচল করতে বলেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তের অন্য প্রান্ত থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে যে সেনা হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহীদের ওপর গুলবর্ষণের কারণে ব্যাপক হতাহত হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে এবং রোববার মায়ানমারের সীমান্তের দিক থেকে আসা বন্দুকযুদ্ধের শব্দ সীমান্তের গ্রামের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে তোলে।
একজন বাসস প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সরকারী সৈন্য এবং বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে উল্লিখিত সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মর্টার শেল এবং গুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। যদিও এতে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারে সরকারি সৈন্য ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা নিরাপদে চলে গেছে। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি মর্টার শেল এবং গুলি এসে পড়েছে। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার রাতে এরকম দুটি সর্বশেষ ঘটনায় একটি বুলেট একটি ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারের উইন্ডশিল্ড ভেঙে দেয় এবং ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় একটি গ্রামের বাড়িতে একটি মর্টার শেল আঘাত করে, তবে কেউ হতাহত হয়নি।’ তিনি বলেন, শনিবার রাতে ও রবিবার সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধের শব্দ সীমান্তের গ্রামের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে তোলে।
দেশটির সীমান্তবর্তী রাখাইন অঞ্চলে সক্রিয় বিদ্রোহী আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের ও সরকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে তার সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা নজরদারির নির্দেশ জারি করেছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের ত্রি-বিন্দু থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ২৭১.০ কিলোমিটার (১৬৮.৪ মাইল) সীমান্ত রয়েছে।
বিশেষ করে ২০১৭ সালের সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পরে, রাখাইনে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা ১০ লক্ষাধিক মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে দৃশ্যত রোহিঙ্গাদের সাথে বর্তমান সংকটের খুব একটা সম্পর্ক নেই। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী সংকট মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। তরে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করায় ঢাকা বারবার রাখাইনে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন চেয়েছে। বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে জাতিসংঘের গণহত্যা তদন্তের বিষয়।