দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পিক-আপ ভ্যান
ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষের নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ জন দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান একজন। তার নাম মো. ইব্রাহীম (৩২)।
এর আগে সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরে অ্যাবলুম ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ঢাকা থেকে মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহন ও আলফাডঙ্গা থেকে ফরিদপুর শহরের দিকে আসা পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘনাস্থলেই ১১ জন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন মারা যান।
নিহতরা সবাই পিকআপ ভ্যানের যাত্রী, চালক ও হেলপার। তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ নিতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। আলফাডাঙ্গা হয়ে বোয়ালমারী থেকে আসছিলেন। পিকআপে চালক হেলপারসহ ১৫ জন যাত্রী ছিলেন।
নিহতরা হলেন, বোয়ালমারী শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রাম রাকিব হোসেন মিলন (৪২), তার স্ত্রী সামিমা ইসলাম সুমি (২৫), তাদের বড় ছেলে আলভী রোহান (৭), ছোট ছেলে আলফাডাঙ্গা মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী আবু সিনান (৪) এবং প্রতিবেশী মৃত আব্দুল ওহাবের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৭০), পিকআপ চালক আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদি গ্রামের নজরুল মোল্ল্যা (৩৫), আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বেজিডাঙ্গা গ্রামের জানাহারা বেগম (৫০), ভাতিজি প্রবাসীর স্ত্রী সোনিয়া বেগম ৩০), সোনিয়ার ১১ মাস বয়সী শিশু সন্তান নুরানী, সদর ইউনিয়নের চরবাকাইল গ্রামের তবি খান (৫৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের হিদাডাঙ্গা গ্রামের শুকুরন বেগম (৯০), তার মেয়ে মনিরা বেগম সূর্য (৫৫), প্রতিবেশী কহিনুর বেগম (৬০) এবং মো. ইব্রাহীম।
এ দুর্ঘটনায় মিলনের মা মনোয়ারা বেগম ওরফে হুরি বেগম (৬৫) মুমূর্ষু অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিসাধীন রয়েছেন। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহনের সঙ্গে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী পিক-আপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মহিলাসহ ১১ জন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন নিহত হন।
নিহত সোনিয়ার স্বজন রহমান মোল্ল্যা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের টিন নিতে সকালে তারা রওনা হন ফরিদপুর ডিসি অফিসের উদ্দেশে। এর আগে উপজেলায় আমরা কয়েক দফা এই ত্রাণ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করি। তারা বলে ত্রাণ ডিসি অফিস থেকে দেওয়া হবে।
বোয়ালমারী শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের নিহত রাকিব হোসেন মিলনের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, আমার ভাই মিলন অর্থ মন্ত্রণালয়ের লিফটম্যানের চাকরি করেন। তিন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ত্রাণের কিছু বরাদ্দ করে দিয়েছিলেন এলাকার কয়েকটি পরিবারের জন্য। সেটা আনতেই আজ সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আমার ভাইয়ের পুরো পরিবার এক সঙ্গে মারা যান। আমার মা’ও ছিলেন তাদের সঙ্গে। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, পিকআপ ভ্যানে ১৫ জন যাত্রীর মধ্যে ১৩ জনই মারা গেছেন। দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে সাতজন মহিলা, তিনজন শিশু ও তিনজন পুরুষ রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে চালকের অসতর্কতার কারণে এবং একই লেনে দুটি গাড়ি আসার ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।