‘আমি সুদীপাদিকে কখনও বলিনি, এসো তোমাকে গোমাংস খাওয়াব’
সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের গোমাংস বিতর্ক নিয়ে একমাত্র মুখ খুললেন সঞ্চালিকা তারিন জাহান।
সুদীপার গোমাংস বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন সঞ্চালিকা তারিন। ছবি: সংগৃহীত।
বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের গোমাংস বিতর্ক নিয়ে উত্তপ্ত ও পার বাংলা। সমাজমাধ্যমে আক্রমণ করা হয়েছে আমাকেও। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগলে মানুষ অবশ্য নিজের মত দেবেন, এটা স্বাভাবিক।
এ পার বাংলা, ও পার বাংলার নানা পদ নিয়ে রান্নার অনুষ্ঠান ‘রাঁধুনী এপার ওপারের রান্না’। কোন পর্বে, কী পদ রান্না হবে তার চিত্রনাট্যে আগে থেকেই ঠিক করা হয়ে যায়। এই রান্নার অনুষ্ঠানকে ঘিরে যত বিতর্ক। আর আমি এই বিতর্কে না চাইতে জড়িয়ে পড়লাম। মনে হল নিজের কথাগুলো পরিষ্কার বলি।
ইদের সময় দর্শকের কথা মাথায় রেখে গোমাংসের একটি পদ চূড়ান্ত করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আমরা দর্শকদের জন্য ওই রান্না দেখিয়েছিলাম। আমি কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে সুদীপাদিকে গোমাংস খেতে বলেছি, বা আমি গোমাংস খাওয়াব বলেছি এমন নয়। আমরা খাওয়া তো দূর, ছুঁয়েও দেখিনি। ওই অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো যে কেউ দেখতে পারেন।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি প্রত্যেকের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে সম্মান করি। এ ভাবেই মা-বাবা বড় করেছেন আমায়। বাংলাদেশেও অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চা হয়। এখানেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আছে। দুর্গাপুজো হয়। আমরা মণ্ডপে যাই। ধর্ম নিজস্ব। কিন্তু উৎসব সকলের।
সুদীপাদির গোমাংস বিতর্কের ঘটনা প্রথমে জানতাম না। সমাজমাধ্যমে অনেকে অনেক কিছু লিখেছেন, সেখান থেকেই ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। আমি তো টেরই পাইনি ওই দেশে এত কিছু হয়ে গিয়েছে!
সুদীপাদি যা বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আরও একটু বিশদে জানাতে চাই। ওই পর্বের ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সুদীপাদি যখন আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “তুমি আজ আমাকে কী রান্না করে খাওয়াবে?” আমি কিন্তু এক বারও বলিনি আমি তোমাকে গোমাংসের পদ রান্না করে খাওয়াব! আমি বলেছি ইদ উপলক্ষে দর্শকের জন্য এই পদের রন্ধনপ্রণালী দেখাব। বখরি ইদে আমরা গোমাংসের পদ রান্না করি। কিন্তু একজন অতিথিকে ইদের সময় তো বলতে পারব না, আমি তোমাকে খাওয়াব না! তাই ‘খাওয়াব না’ কথাটা বলিনি ,আবার ‘গোমাংস খাওয়াব’ও বলিনি।
তা-ও আমাকে ভুল বোঝা হল। সমাজমাধ্যমে লেখা হল, মানসী সিংহের ছবিতে অভিনয়ের জন্য যখন আমি কলকাতায় যাব, তখন আমাকে শুয়োরের মাংস খাওয়ানো হবে! আমি অবশ্য নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, মানুষ কোথাও আঘাত পেয়েছে বলে আবেগের বশে এই ধরনের কথা বলে ফেলেছে। কিন্তু এই আঘাত স্বনির্মিত। আর কিছু কিছু মানুষ চরমপন্থীও বটে, ঘটনার আকস্মিকতায় হুট করে কথা বলে দিয়েছে। যে বা যারা বলেছে, তারা তো নিজের দেশকে আরও ছোট করেছে। আমাদের এখানে কেউ এই কথা বলেনি।
একটি রান্নার অনুষ্ঠান ঘিরে এত বড় ঘটনা হয়ে গেল। এখন সুদীপাদি কী বলতে চেয়েছেন, কেন ওঁকে নিয়ে ট্রোল করা হল, কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। অনুষ্ঠান তো দর্শকের জন্যই, আমার আর সুদীপাদির অনুষ্ঠান তো নয়। দুই দেশের মানুষ, দুই দেশের খাবার, রন্ধনপ্রণালী দেখানোর জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। তাতে যেন চিড় না ধরে। আনন্দবাজার পত্রিকা।