তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
ধ্বংসযজ্ঞকারীদের রুখে দিতে জনসাধারণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তির মেট্রোরেল পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না। সরকারের উন্নয়ন যারা ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এ তাণ্ডব যারা করেছে, তাদের বিচার দেশবাসীকে করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতাকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে শেষে কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্র পৌঁছাতে পারে সেটা সুনিশ্চিত করা হবে, দেশ যেন আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে সেই চেষ্টা করা হবে। এ দেশ মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে, সেটা ব্যর্থ হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, যে স্থাপনাগুলো মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছিল, সেগুলো ধ্বংস করা আসলে কোন ধরনের মানসিকতা। ঢাকা শহর যানজটে নাকাল থাকলেও মেট্রোরেল স্বস্তি দিয়েছিল মানুষদের। আধুনিক প্রযুক্তির এ পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না। দেশবাসীর কষ্ট লাঘবে সরকার যে উন্নয়ন করেছে, সেগুলো ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির মেট্রোরেল এ পরিবহন এভাবে ধ্বংস করেছে তা মানতে পারছি না। এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু সেই কাজই করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী থেকে দেশবাসীদের বলেছিলাম একটু ধর্য্য ধরতে হবে, আদালত যখন নিয়েছেন তখন তো একটু ধর্য্য ধরতে হবে। কোটা সংস্কার বাতিল চেয়ে করা মামলাটি তো সরকার করেছে। আপিল তো সরকার করেছে, কাজেই তাদের ধর্য্য ধরতে হবে। তাদের যেটা প্রত্যাশা, সেটাই পূরণ করা হবে এবং হতাশ হতে হবে না। আমি এ আশ্বাস দিয়ে তাদের বলেছিলাম আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু তারা সেটা করল না।
তিনি বলেন, যে দাবি তারা (শিক্ষার্থী) করেছিল, তার চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে। আদালত দিয়ে দিয়েছেন। তারপরও এখনও তারা থামেনি, কেন থামিনি? সেটা দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই। প্রথমে আসল এক দফা, তারপরে আসল ৪ দফা, ৬দফা আবার ৮ দফা, আবারও ৪ দফা আসল। আবার ৪ দফায় হবে না ৮ দফা-এইভাবে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো এবং সেই সাথে সাথে ধ্বংসযজ্ঞ। ধ্বংসযজ্ঞটার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ মেট্রোরেলে কী আমি চড়ব, শুধু কী সরকারি লোকজন চড়বে, শুধু কী মন্ত্রীরা চড়বে, না সাধারণ জনগণ চড়বে সেটা আমার প্রশ্ন? এর উপকারিতা কারা পাচ্ছে, এদেশের মানুষ, সাধারণ জনগণ পাচ্ছে। তাহলে এর উপর এতো ক্ষোভ কেন? যানজট থেকে রেহাই পেতে যে কষ্টটা আমি লাঘব করতে চেয়েছি সাধারণ জনগণের, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে, দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার দেশবাসীকে করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
নাশকতার ছকে এ পরিবহন ব্যবস্থা থমকে যাওয়ায় চিরাচরিত যানজটের ভোগান্তি যে আবারও ফিরেছে নগরে, তাও দৃশ্যমান গত দুদিনের কারফিউ পরিস্থিতির মধ্যে৷ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রো উদ্বোধনের পর আজ সকালে সেই মেট্রোরেল স্টেশনেই আসতে হলো প্রধানমন্ত্রীকে৷ নতুন কোনো সৃষ্টিতে নয়, আসতে হয়েছে ধ্বংসের নমুনা দেখতে৷ সকাল ৯টার পর মিরপুর-১০নম্বর মেট্রো স্টেশনের বিভিন্ন দিক পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেন ক্ষতচিহ্ন নিয়ে কিভাবে দাঁড়িয়ে স্বপ্নের এ পরিবহন ব্যবস্থা৷
চূর্ণ-বিচূর্ণ যন্ত্রাংশ আর অসংখ্য কাঁচের টুকরোর ওপর হেঁটে, উপস্থিত গণমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি প্রশ্ন রাখেন, মানুষের উপকার করা, সমাজকে এগিয়ে রাখা উদ্যোগগুলোর ওপর কিসের এতো ক্ষোভ?
নাশকতাকারীদের শুক্রবারের (১৯ জুলাই) সহিংসতায় অচল মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন। এ দুই স্টেশন পুনরায় চালু হতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল ৩টার পর থেকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ মিরপুর ১০ নম্বরের স্টেশনের ডি গেইট এবং এ গেইট ভেঙে প্রায় ৩০০ জনের মতো প্রবেশ করেন। স্টেশনে গিয়ে যে যা পান সেগুলো ভাঙচুর করে। নাশকতাকারীদের তাণ্ডবে মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। সব কিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দীকি সময় সংবাদকে বলেন, স্টেশনে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সব কিছুতেই আঘাত করেছে। প্রয়োজনীয় সব কিছু নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু তারা নিয়ে চলে গেছে। এ ছাড়া যে জিনসগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, তার অধিকাংশই মেরামতযোগ্য নয়।
এম এ এন ছিদ্দীকি বলেন, দুর্বৃত্তরা মেট্রোরেল স্টেশনটাকে এমনভাবে তছনছ করেছে তাতে মনে হয় যে, তাদের ভেতর সামান্যতম দেশাত্মবোধ নেই। এমন একটা সম্পদ ধ্বংস করার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে।
কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের জন্য একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্টেশনগুলো যেভাবে ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে, তা ঠিক করতে ন্যূনতম এক বছর বা তার বেশিও লাগতে পারে। কারণ এগুলো অর্ডার দিয়ে প্রোডাকশন করতে হয়।