ছয় ব্যাংককে এস আলমের ঋণ দেওয়ার সীমা বেঁধে দিল কেন্দ্রিয় ব্যাংক
শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণে সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংককে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও সীমাতিরিক্ত ঋণ আছে, তা নগদ আদায় ছাড়া নবায়ন করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে ব্যাংক ছয়টিকে চিঠি দিয়েছে। ব্যাংক ছয়টি হলো- ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক। এর আগে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
বির্তকিত এস আলম গ্রুপ এই ছয় ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর আত্মগোপনে যান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তার সময়ে ব্যাংক ছয়টিকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব টাকাও লুটে নিয়েছে গ্রুপটি। গত বুধবার গভর্নর হিসেবে যোগ দেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। এরপরই নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থার অবনমন রোধ ও আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উন্নতি ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংক কোম্পানি আইনে অর্পিত ক্ষমতাবলে এই নির্দেশ দেওয়া হলো।
নির্দেশনাগুলো হলো- কৃষি বিনিয়োগ, চলতি মূলধন এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেওয়া ঋণ, নিজ ব্যাংকে রক্ষিত স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ সুবিধা ও শতভাগ নগদ মার্জিনের বিপরীতে ঋণ ও অন্যান্য পরোক্ষ ঋণসুবিধা ছাড়া অন্য কোনো ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে না। এসব ঋণ ও ঋণ সুবিধা পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বা সীমাতিরিক্ত বকেয়া ঋণের স্থিতি নগদ আদায় ছাড়া কোনো গ্রাহকের বিদ্যমান ঋণ সুবিধা নবায়ন বা বর্ধিত করা যাবে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংককে শীর্ষ ২০ ঋণ গ্রাহকের ঋণ আদায়ের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে জমা দিতে হবে।
আওয়ামীলীগ সরকারের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এস আলম গ্রুপ নিয়ম বর্হিভূতভাবে একাধিক ব্যাংক দখল করে নেয়। গ্রুপটি ২০১৭ সালে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড দখল করে নেয়। বর্তমানে শুধু এই ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।