শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখন সংকট কাটেনি: মির্জা ফখরুল

শেয়ার করুন

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি করা যাবে ততই এদেশের কল্যাণ হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার্লামেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে জনগণের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা একটি বৈষম্যহীন সাম্যের বাংলাদেশ দেখতে চাই। কল্যাণকর রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই যাতে সজাগ থাকি।

আজ শুক্রবার আওয়ামী কোথায়, পালিয়েছে কিন্তু তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখন সংকট কাটেনি। শিল্প এলাকায় তাদের লোকজন অশান্তি সৃষ্টি করছে। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে তারা অস্থিতিশীল পরিবেশ করে সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আপনারা সজাগ থাকবেন। আমরা হিন্দু ভাইদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই আপনাদের পাশে দাঁড়াবে।

শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রয়াত বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব আ স ম হান্নান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হান্নান স্মৃতি সংসদদের আয়োজনে স্মরণ সভায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।

এই সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার পরিচালনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল ইসলাম রতন, বেনজির আহমেদ টিটু, নজরুল ইসলাম আজাদ, ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা সেফাউল হক, বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক শাফিন, শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে কোন নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে হয় নি। শেখ হাসিনা মনে করেছিল নির্যাতন নিপীড়ন করে তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবে। তারা অনিয়ম- দুর্নীতির নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিরা কত টাকা পাচার করেছে, চুরি করেছে তা আপনারা দেখছেন।

যারা একদিন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল, তাদেরকেই আজকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করে পুলিশ কারাগারে পাঠাচ্ছে। এটা আল্লাহর বিধান। যে শেখ হাসিনা অত্যন্ত বাগরাম্বর করে বড় গলায় বলেছিল যে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমি পালাতে জানিনা। উত্তাল ছাত্র-জনতা সুনামি যখন শুরু করেছিল সেই শেখ হাসিনা তখন অতি দ্রুত গণভবন থেকে বেরিয়ে পালিয়ে গেছে।

গত ১৭ বছরের আমাদের বিএনপির এক হাজার লোককে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লক্ষ লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের নেতা কর্মীরা ঘুমাতে পারতাম না।

প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা হান্নান শাহ সম্পর্কে তিনি বলেন, কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে তাঁর ব্যাথা শুরু হয়, তারপর হাসপাতালে নিতে একটি চলে যান। এই মানুষটি ছিল সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক। তিনি একজন সেনাবাহিনীর লোক হলো আপাদমস্তক ছিলেন একজন গণতান্ত্রিক মানুষ। গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি সবসময় কথা বলে গেছেন।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, যে সরকার এখন এসেছে সেই সরকারকে বলা হয় অন্তবর্তী কালের সরকার। যিনি এই সরকারের প্রধান প্রধান তিনি দেশের মানুষের কাছে অনেক শ্রদ্ধার মানুষ, নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সাথে যারখ আছেন তারাও অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। সেই পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি দেশে সংস্কার করে নির্বাচনী উপযোগী করে একটা পরিবেশ করতে হবে। সংস্কার আমরাও চাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবসময় লড়াই করেছি সংগ্রাম করেছি।
আমাদের নেত্রীকে বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। তাকে দেশে নিয়ে আসতে পারেনি নানা কারণে। অবিলম্বে তারেক রহমানের সকল মামলা প্রত্যাহার করে করে দেশে ফিরে আসার পরিবেশ করা হোক। বিএনপি’র নেতা কর্মীদের সমস্ত মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
বিরোধী দলের নেতাদের মামলা প্রত্যাহার না হলে কখনোই নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ হবে না। একটা প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হবে না। কাল বিলম্ব না করে সকল মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। যত দ্রুত নির্বাচন করা হবে, ততই এ দেশের জন্য মঙ্গল হবে।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটি কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই , বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে পার্লামেন্ট সরকার গঠন করতে হবে, সেই সরকার দেশ শাসন করবে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব দেশের প্রশাসনকে সংস্কার করে নির্বাচনের উপযোগী করতে হবে।
নির্বাচনে যৌক্তিক সময় আমরা দেব। যত দ্রুত নির্বাচন করা যাবে ততই দেশের জন্য কল্যাণকর হবে।

তিনি বলেন, কোনরকম তালবাহানা আমরা সহ্য করব না। অবিলম্বে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। দলের সকলের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, এটাই আমাদের দাবি। মামলা প্রত্যাহার করে গণতন্ত্রকে সংহত করার দাবি জানাই। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হলে কখনো একটি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে না।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহ রিয়াজুল হান্নানকে নির্বাচিত করার জন্য কাপাসিয়াবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। দুপুরের আগেই এই স্মরণসভায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দলীয় নেতা কর্মীরা স্কুল মাঠে জ্বর হতে থাকেন।

এর আগে মীরজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগুটিয়া এলাকায় গিয়ে হান্নান শাহ’র কবর জিয়ারত ও খবরে পুস্পষ্ট অর্পণ করেন।


শেয়ার করুন

Similar Posts