খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল বিতরনের মাষ্টার রোল ঠিকঠাক, বিক্রি হচ্ছে কালো বাজারে

শেয়ার করুন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ১৫ টাকা কেজি দরের চাল বিতরনের মাষ্টার রোল’র ডকুমেন্ট কাগজে কলমে সঠিক আছে, তবে ঠিক নেই উপকারভোগীদের মাঝে সঠিক ওজনের চাল বিতরন। মোটা দাগে উপকারভোগীদের মাঝে ৩০ কেজির বদলে ১৭-২২ কেজি চাল বিতরনের পর উদ্বৃত্ত চাল বস্তা বদল হয়ে গোপনে বিক্রী হচ্ছে কালো বাজারে।

স্থানীয় সচেতন মহল সহ ভুক্তভোগীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মেলেনি কখনও। পরে হয়রানীর শিকার হতে হয় অভিযোগকারীকে। এতে অভিযোগ জানাতে আর আগ্রহ নেই কারও।

সূত্র জানায়, ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া অনেক ডিলার মামলা, হামলার ভয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।

এতে উপজেলার ৩৪ ডিলারের ১৯ জন ডিলার ১০ হাজার ৯ শ’ ১৭ জন উপকারভোগীর মাঝে চাল বিতরন করলেও ১৫ ডিলারের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৯ হাজার ২শ’ ৩৬ উপকারভোগী পরিবারের ২৭৭.০৮০ মে. টন চাল বিতরনে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

যা পরবর্তীতে ডিলার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ ছাড়াই ফের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া নতুন ডিলারদের মাধ্যমে বিতরন করা হয়। সেপ্টেম্বর’২৪ মাসে উপজেলায় ২০, ১৫৩ উপকারভোগী পরিবারের জন্য ৩৪ ডিলারের অনুকূলে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল বরাদ্দ দেয়া হয় ৬০৪.৫৯০ মে.টন। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরের চাল নিয়েও উপকারভোগীদের মাঝে ওজনে কম পাওয়ার অভিযোগ শোনা যায়।

এমনকি উপকারভোগীদের বরাদ্দকৃত চাল কালো বাজারে বিক্রীর সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হলেও এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে। এখন চলছে নভেম্বরের বরাদ্দের চাল বিতরন। তবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২ জন ডিলার এখনও চালান জমা দেয়নি অফিসে। বাকী ডিলারদের মধ্যে এখনও ৫ জন ডিলার তাদের অনুকূলে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করেনি খাদ্য গুদাম থেকে।

যদিও নীতিমালা অনুযায়ী মাসের ৭ তারিখের মধ্যে মাসিক চাহিদার অর্ধেক পরিমান চাল উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এবং উত্তোলনের সাথে সাথে এসএমএস করে ট্যাগ অফিসার ও ইউএনওকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু কলাপাড়ায় কোন নিয়ম নীতি মানছেন না ডিলাররা।

সূত্রটি আরও জানায়, অক্টোবর মাসে চরচাপলি বাজার বিক্রয় স্থানে ৭৩৮ কার্ডধারী পরিবারের অনুকূলে ডিলারকে বরাদ্দ দেয়া হয় ২২.১৪০ মে.টন চাল। ৩০ কেজির বস্তার সেলাই খুলে চাল রেখে ফের সেলাই দিয়ে এসব পরিবারকে ১৭-২২ কেজি করে চাল বিতরন করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এমনকি বিতরনের সময় তদারকি কর্মকর্তাকেও দেখা যায়নি। অত:পর বস্তা পাল্টে ৫০ কেজির বস্তা ভর্তি ২৬ বস্তা চাল বিক্রী কালে আটক হয় স্থানীয়দের হাতে, যা পরে জিম্মা রাখা হয় একজন প্রভাবশালীর কাছে। ক’দিন না যেতেই সব পক্ষ ম্যানেজ হয়ে আটককৃত চাল নিয়ে নেয় ক্রেতা ব্যবসায়ী।

যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ডিলার এবং জিম্মা রাখা সেই প্রভাবশালী। কম, বেশী একই তথ্য শোনা যায় উপজেলার অধিকাংশ বিক্রয় প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এসব ডিলাররা রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা।

এদিকে অভিযুক্ত ডিলার সহ তদারকি কর্মকর্তারা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল বিতরনে কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবী করলেও অক্টোবর মাসের চাল বিতরনের অধিকাংশ মাষ্টার রোল এখনও জমা পড়েনি অফিসে। যে ক’টি জমা পড়েছে তাতে কোন টিপ সহি নেই, সব স্বাক্ষর দেয়া বলে জানা গেছে। এতে মনে হচ্ছে উপকারভোগী ২০, ১৫৩ জনের সকলেই স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। আসলেই কি তাই? না বাস্তবতা ভিন্ন রয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্র জানায়, খাদ্য শস্য আত্মসাৎ বা ঘাটতি হলে অর্থনৈতিক মূল্যের দ্বিগুন হারে আদায়যোগ্য হবে এবং ডিলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যাবে। উপজেলায় এ পর্যন্ত গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে দুই জন ডিলারের বিরুদ্ধে খাদ্য অধিদপ্তর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। এরমধ্যে একটি মামলা তদন্ত করে দুদক। তবে দু’টো মামলাতেই ডিলাররা খালাস পেয়ে গেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, নভেম্বরের চাল বিতরন শেষে ওএমএস’র মতো খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর বিদ্যমান সকল ডিলারশিপও বাতিল হয়ে যাবে। মন্ত্রনালয় থেকে এ বিষয়ে পরিপত্র জারি হওয়ার পর ইতিমধ্যে নতুন ওএমএস ডিলার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।

উপজেলার চরচাপলি বাজার বিক্রয় স্থানের তদারকি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন’র কাছে অক্টোবর মাসের চাল বিতরনের তারিখ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার সঠিক মনে নেই। নভেম্বরের চাল আজ ও গতকাল উপস্থিত থেকে সঠিক ভাবে বিতরন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল্লাহ বলেন, ’খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল বিতরন নিয়ে ছোট খাটো দু’একটি মৌখিক অভিযোগ এলেও লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি কারও কাছ থেকে। অভিযোগ পেলে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


শেয়ার করুন

Similar Posts