মোদির পোস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরল বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

বিজয় দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। মোদির ওই লেখায়, পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছিল না একটি শব্দও। বরং ১৬ ডিসেম্বরকে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয় হিসেবে দাবি করেন মোদি। তার এমন পোস্টের পর বাংলা‌দেশের মু‌ক্তিযু‌দ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধ‌রে‌ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে মু‌ক্তিযু‌দ্ধের ইতিহাস তুলে ধ‌রা হয়।

‘ইতিহাসের তথ্য’ শিরোনামে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ৯ মাসব্যাপী নৃশংস যুদ্ধ সহ্য করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড : ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশন্স’ শিরোনামে তার বইয়ে, সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব, কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রয়াত জেএন দীক্ষিত লিখেছেন, ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ভারতীয় সামরিক হাইকমান্ডের একটি বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল যৌথ কমান্ডের বাংলাদেশ পক্ষের কমান্ডার জেনারেল এমএজি ওসমানির উপস্থিতি নিশ্চিত এবং স্বাক্ষরকারী করতে ব্যর্থতা।’

‘তার অনুপস্থিতির আনুষ্ঠানিক অজুহাত ছিল যে, তার হেলিকপ্টারটি উড্ডয়ন করেছিল কিন্তু আত্মসমর্পণের সময়সূচি অনুযায়ী সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু ব্যাপক সন্দেহ ছিল যে তার হেলিকপ্টারটি ভুল পথে পাঠানো হয়েছিল, যাতে তিনি সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে না পারেন এবং অনুষ্ঠানে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ভারতীয় সামরিক কমান্ডারদের ওপর নিবদ্ধ হয়। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক বিচ্যুতি ছিল যা ভারত এড়াতে পারতো’, বলা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃ‌তিতে আরও বলা হয়, ‘এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানির উপস্থিতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন অনেক রাজনৈতিক ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সাহায্য করতে পারতো।’

‘আমরা ১৯৭১ সালে আমাদের গৌরবময় বিজয় উদযাপন করি, আমরা সত্য উদযাপন করি’, বলা হয় বিবৃতিতে।

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ও এক্স হ্যান্ডে‌লে একটি পোস্ট দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এতে তিনি লিখেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে, ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ আত্মোৎসর্গ ও অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এই দিনটি তাদের অসাধারণ বীরত্ব ও অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে গেঁথে থাকবে।’

পোস্টটিতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গিয়ে একাত্তরের বিজয়কে কেবল ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলা হয়েছে। যা বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে আহত করেছে।


শেয়ার করুন

Similar Posts