গাজীপুরের ইজতেমা ময়দানে হতাহতের ঘটনায় মামলা দায়ের

শেয়ার করুন

তাবলীগ জামায়াতের নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা সা’দ কান্দলভি অনুসারী ইজতেমার একজন জিম্মাদার মুফতি মুআজ বিন নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুরায়ে নেজামীর জুবায়ের অনুসারী ও নিজামউদ্দিন মারকাজের সা’দ কান্দলভি অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় মাওলানা সাদ অনুসারী ২৯ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জুবায়েরের অনুসারী এবং কিশোরগঞ্জের আলমি শুরার সাথী এম আলম হোসেন বাদী হয়ে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে টঙ্গী পশ্চিম থানায় এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে, দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহতের পর উত্তেজনা কর পরিস্থিতিতে সরকারি সিদ্ধান্তে ইজতেমা মাঠের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী। ‌ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সেনা সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন রয়েছে।

টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান জানান,
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা মুআজ বিন নূর গ্রেপ্তার হন। এছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তিনি
(ওসি) মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিদের বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।

ইজতেমা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার গাইটাল গ্রামের মৃত এস এম মোক্তার হোসেনের ছেলে এস এম আলম হোসেন বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন। তিনি জুবায়েরের অনুসারী এবং কিশোরগঞ্জের আলমি শুরার সাথী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক’শ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দেয়ার পর রাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন সাদ অনুসারী মুফতি মুআজ বিন নূর।

মামলায় আসামিরা হলেন- ঢাকার ধানমন্ডি থানার আবাসিক এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, খুলনার বাটিয়াঘাটা উপজেলার বড় কড়িয়া গ্রামের মনসুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ মনসুর, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে ওসামা ইসলাম আনু, একই এলাকার ড. কাজী এরতেজা হাসান, উত্তরা এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে মোয়াজ বিন নূর, সাভার থানা এলাকার জিয়া বিন কাশেম, তুরাগ থানা (বেলাল মসজিদ) এলাকার আজিমুদ্দিন, সাভার থানার সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মুগদা থানা (বড় মসজিদ) এলাকার শফিউল্লাহ, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা এলাকার মৃত মাওলানা মোজাম্মেলুল হকের ছেলে আনাস, মোহাম্মদপুর থানা এলাকার আব্দুল্লাহ শাকিল, রমনা থানার কাকরাইল এলাকার রেজা আরিফ, উত্তরা পশ্চিম থানার (সেক্টর-৯) আব্দুল হান্নান, একই থানার (সেক্টর-১১) রেজাউল করিম তরফদার, তুরাগ থানার (বেলাল মসজিদ) এলাকার মুনির বিন ইউসুফ, ঢাকার সায়েম, হাজী বশির সিকদার, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মনির হোসেন, মীরপুর থানা এলাকার প্রকৌশলী মুহিবুল্লাহ, ঢাকার পল্লবী থানা এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আতাউর রহমান, এলিফ্যান্ট এলাকার তানভীর, তুরাগ থানার ভাটুলিয়া এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে বাবুল হোসেন, একই থানা এলাকার প্রকৌশলী আবুল বশর, প্রকৌশলী রেজনুর রহমান, উত্তরা থানার (সেক্টর ১০) মৃত ফজলুল হক সিকদারের ছেলে নাসির উদ্দিন সিকদার, ড. আব্দুস সালাম, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওয়াসি উদ্দিন, রাজধানীর মীরপুর থানা এলাকার মিজান, তুরাগ থানার (বেলাল মসজিদ) এলাকার শাহাদাতসহ কয়েক’শ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, উল্লেখিত আসামিরা মাওলানা সাদ কান্ধলাভীর অনুসারী। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তার সই করা চিঠির মাধ্যমে সারা দেশের সাদপন্থিদের জানান যে আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানেই পুরনোদের জোড় হবে। ওই চিঠিতে পুরনো সাথীদের সঙ্গে মোনাসেব সাথীদেরও নিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে যেন টর্চলাইট ও হ্যান্ডমাইক থাকে।

মামলার ২ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ মনসুর ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দেন, পুরনোদের জোড়ে এবং বিশ্ব ইজতেমায় যদি মাওলানা সাদ সাহেবকে আনতে দেওয়া না হয় এবং তাদের যদি টঙ্গী ময়দানে ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর জোড় করতে দেওয়া না হয়, তাহলে তারা বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব হতে দেবে না।

তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্যের পর বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ও পাহারারত আলমি শুরার সাথীদের ওপর হামলা করা হয়। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৬৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত শেখ সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং বগুড়া সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।]


শেয়ার করুন

Similar Posts