মা-কে সুস্থ করে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা তারেকের প্রতিবেদন আনন্দবাজারের
বিএনপি সূত্রের খবর, পূর্ব লন্ডনে পুত্র তারেক রহমানের বাসভবনেই উঠবেন বেগম খালেদা। মায়ের চিকিৎসার বিষয়টি পুরোটাই দেখাশোনা করবেন তারেক, যিনি বিএনপি-র অস্থায়ী চেয়ারম্যানও।
(বাঁ দিকে) তারেক রহমান। (ডান দিকে) খালেদা জিয়া। ফাইল ফটো।
এ মাসের প্রথমার্ধেই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি-র চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার। সেখানে বয়সজনিত নানা অসুস্থতা এবং লিভার বৈকল্যের চিকিৎসা হবে তাঁর।
বিএনপি সূত্রের খবর, পূর্ব লন্ডনে পুত্র তারেক রহমানের বাসভবনেই উঠবেন বেগম খালেদা। মায়ের চিকিৎসার বিষয়টি পুরোটাই দেখাশোনা করবেন তারেক, যিনি বিএনপি-র অস্থায়ী চেয়ারম্যানও।
দলীয় সূত্রে খবর, বেগম জিয়াকে সুস্থ করে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে তারেকের। তাঁর এই ঘরে ফেরা উপলক্ষে দেশ জুড়ে কর্মসূচি নিতে চলেছে বিএনপি। দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, যুবনেতা তারেক দেশে ফেরা মাত্র বিএনপি নেতা-কর্মীরা যেমন চাঙ্গা হয়ে উঠবেন, বিএনপি-র পক্ষে জন সমর্থনেরও ঢেউ উঠবে। সহসা বদলে যাবে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্রপট।
কবে দেশে ফিরতে পারেন বিএনপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক? বিএনপি নেতৃত্বের আশা-ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের গোড়াতেই মাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরবেন তিনি। খালেদার চিকিৎসায় সময় লাগলে বড় জোর এপ্রিলে। খালেদা লন্ডনে পৌঁছলে অসুস্থ শাশুড়ির দেখভালের দায়িত্ব তুলে নেবেন তারেকের স্ত্রী জুবায়দা, যিনি নিজেও এক জন চিকিৎসক।
গত অগস্টের ৮ তারিখে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার শপথ নেওয়ার পরেই বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদার সব মামলা তুলে নেওয়া হয়। তাঁর কারাদণ্ড মকুব করে দেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তবে তারেক গ্রেফতারি এড়াতে দেশে ফেরেননি। গত পাঁচ মাসে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে করা মামলাগুলি বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যেই ২১ অগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা থেকে তারেককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সরকার পক্ষ তারেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির চারটি মামলা বন্ধ করার রায়ের বিরোধিতা করে হাই কোর্টে আবেদন করেছিল। রবিবার হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে মামলাগুলি বন্ধ করার প্রক্রিয়া চালু রাখার নির্দেশই দিয়েছে।
সংগঠনকে চাঙ্গা করতে গত চার মাস ধরে জেলা স্তরে সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। প্রায় প্রতিটি সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা দিয়েছেন তারেক। প্রতি বক্তৃতাতেই তিনি নির্বাচনের জন্য বিএনপি কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে যখন সাম্প্রদায়িক মনোভাবের অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি-র অস্থায়ী চেয়ারম্যান সব কর্মীকে সম্প্রীতি রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। বন্যার সময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে থাকার নির্দেশও দিয়েছিলেন।
ঢাকায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বা স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ যেমন একাধিক বার লন্ডনে গিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারেকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্য ইসলামি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে লন্ডন ঘুরে এসেছেন বলে খবর।
তবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলি প্রত্যাহারের গতিতে বিএনপি নেতৃত্ব সন্তুষ্ট নন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল একাধিক বার এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রবিবার লন্ডন থেকে ফিরে দলের নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়- “কবে ফিরবেন তারেক রহমান?”
উত্তরে ক্ষুব্ধ সালাউদ্দিন বলেন, “তাঁকে দেশে ফেরানোর মতো পরিস্থিতি আমরা তৈরি করতে পারিনি।” বিএনপি নেতৃত্ব মনে করছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশলেরই অঙ্গ হল তারেকের উপর থেকে মামলা তোলায় গড়িমসি। বাড়তি সময় নিয়ে সরকার তথাকথিত বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গড়ার কৌশল নিয়েছে, যাকে বলে ‘কিংস পার্টি’।
এ দিন সালাউদ্দিন বলেন, “নির্বাচন বিলম্বিত করার যে কোনও কৌশল জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন। দ্রুত নির্বাচন জরুরি। নতুন দলকে স্বাগত জানানো হবে, তবে সেটা যেন ‘কিংস পার্টি’ না হয়।” সম্প্রতি ‘সংবিধান কবর’ দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েও পিছিয়ে যায় ছাত্ররা। বিএনপি নেতা বলেন, “সংবিধান কবর দেওয়া যায় না। সংবিধানে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের কথা ভাবা যেতে পারে।”
দলে কি তারেক রহমানই একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর মুখ? বিএনপি-র ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায়চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেসে যেমন গান্ধী পরিবার, বিএনপি-র জিয়া পরিবার। দলে এই পরিবারের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। খালেদা বা তারেকরহমানের চেয়ে বেশি আর কেউ দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। বেগম জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতিতে তারেক রহমানই দলের স্বাভাবিক প্রধানমন্ত্রী মুখ বলা যায়।
এ বিষয়ে দলে কোনও ভিন্ন মত নেই।” নিতাইও মনে করেন, তারেক দেশে ফিরলে বাংলাদেশের রাজনীতির ছবিটাই বদলে যাবে। নির্বাচন পিছোনো বা বিএনপিকে কোণঠাসা করারকোনও চক্রান্ত হলে, সেগুলিও বানচাল হয়ে যাবে।
আপাতত সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষাতেই খালেদা জিয়ার দল।