সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ‘বাংলাদেশ মেডেল ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স’ প্রদান করল ঢাকা
বাংলাদেশ-সৌদি আরব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অভূতপূর্ব উচ্চতায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলানের অসামান্য অবদানের জন্য ঢাকা আজ তাকে এই বছরের ‘বাংলাদেশ মেডেল ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স’ প্রদান করেছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সম্মাননা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মহামান্য ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলানের মেয়াদে বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্ক অভূতপূর্বভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রদূত ঈসার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যকার সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সৌদি আরব বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও জ্বালানি নিরাপত্তায় বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও সুসংহত করার জন্য রাষ্ট্রদূতের গতিশীলতা ও প্রতিশ্রুতি অনুকরণীয়।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির ওই চ্যালেঞ্জিং সময়ে ঈসা সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কল্যাণ, সুরক্ষা এবং তাদের কর্মসংস্থানের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে এক অতুলনীয় নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি তার সহানুভূতি ও রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়েছে- যা আমাদের দু’দেশের জনগণের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করেছে।’
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাস জুড়ে সৌদি আরব একটি অবিচল বন্ধু ও বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এই বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে।
তৌহিদ আরও বলেন, ‘আজ আমাদের দু’দেশের মধ্যকার এই সহযোগিতা-উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে অভিন্ন লক্ষ্যের জন্য যৌথ সমর্থনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করেছে।’
তিনি বলেন, সৌদি আরবে কর্মরত ত্রিশ লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী তেল সমৃদ্ধ দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে চলেছেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এই আন্তঃনির্ভরতা আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সুদৃঢ় ও ক্রমবর্ধমান সংযোগকেই প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশে অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আর্থিক খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সৌদি আরবের দূরদর্শীসম্পন্ন বিনিয়োগ এই বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করেছে।’
সৌদি রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকায় তার পাঁচ বছরের চাকরি জীবনে তিনি সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের সম্পর্কের বহুমুখিতা হজ, ওমরাহ বা জনশক্তির বাইরেও বিস্তৃত। এর মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, পর্যটন ও সহযোগিতার অন্যান্য সকল দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- যা আমাদের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় ও গভীর করেছে।
রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান তাকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায় তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ নেতৃত্বের দূরদর্শী নির্দেশনা ও অটল সমর্থন, দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি অত্যন্ত আন্তরিক আবেগের সঙ্গে বলেন, ‘এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি একটি অসাধারণ সুযোগ এবং আমি এই অবিশ্বাস্য সম্মানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই পুরস্কার আমাদের দুই দেশের মধ্যকার সুদৃঢ় বন্ধনের প্রতীক এবং আমি এই যাত্রার অংশ হতে পেরে গর্বিত।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত পাঁচ বছরে সৌদি-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার মধ্যে উভয় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০টিরও বেশি উচ্চ পর্যায়ের সফরসহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়নও লক্ষ্য করা গেছে।
রাষ্ট্রদূত ঈসা আরও বলেন, ‘আমরা হজ ও ওমরার জন্য ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি, যার মধ্যে রয়েছে নুসুক ও মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ- যা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হজ প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য এই বছর বাস্তবায়িত হবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত তিন বছরে সৌদি দূতাবাস ২২ লাখেরও বেশি কর্মী-ভিসা দিয়েছে- যা সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে।
রাষ্ট্রদূত এই পুরস্কার সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ, দেশটির ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ ও তার পরিবারের প্রতি উৎসর্গ করেছেন।