বাফুফে সভাপতির অপেক্ষায় নারী ফুটবলাররা
‘দক্ষিণ এশিয়ার দুবারের সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমা। তার পরও তার উচ্চতা নিয়ে নিয়মিত কটাক্ষ করেন ব্রিটিশ কোচ পিটার জেমস বাটলার। এরকম বিভিন্নভাবে আমাদের অপমান করতে ছাড়েন না তিনি,’ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম ডিফেন্ডার নিলুফার ইয়াসমিন। অসম্মান, কটূক্তি, মানসিক চাপে ভেঙে পড়া সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভিনরা কাঁদলেন। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে একাট্টা জাতীয় নারী ফুটবল দলের সিনিয়র সদস্যরা। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের ফেরার অপেক্ষায় তারা। সভাপতি দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে বসে কথা বলতে চান তারা। তাদের কথায়, ‘সভাপতির সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাই। তিনি যদি কোচ বাটলারকে রেখে দেন, তাহলে আমরা বাড়ি চলে (অবসর) যাব। তার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।’
১৫ জানুয়ারি সাবিনাদের অনুশীলন শুরু হয়েছে। কিন্তু সিনিয়র ফুটবলাররা জিম করেই সময় পার করছেন। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্তে অটল সিনিয়র ফুটবলাররা।
কাল সন্ধ্যায় বাফুফে ভবনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোচের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিন বলেন, ‘আমাদের কী সমস্যা তা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। যে আঘাত পায় সে-ই বোঝে আঘাত কতটা গুরুতর। এই কোচকে রাখার পেছনে কিরন (মাহফুজা আক্তার) ম্যাডামের ইগো বেশি কাজ করেছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘কদিন আগে আমাদের রুমে কোচকে নিয়ে যান তিনি (কিরন)। মাতসুশিমা সুমাইয়াকে দেখে বলেন, গুড মর্নিং। তারপর কোচের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তোমাদের নতুন কোচ। এটা তামাশা ছাড়া আর কিছুই না।’
ফরোয়ার্ড সানজিদা আক্তার দলে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভুটানে যাওয়ার আগে কিরন ম্যাডামকে কোচের বিষয়ে বলেছি। তিনি শোনেননি। নেপালে যাওয়ার আগেও অভিযোগ করেছিলাম। তিনি আমলে নেননি। আমরা যদি জুনিয়রদের প্রমোট করতাম, তাহলে কোচের বিরুদ্ধে আমাদের মতো তারাও ‘না’ লিখে দিয়ে আসত। কই, তারা তো ‘হ্যাঁ’ (কোচকে চায়) লিখে দিয়েছে।’
অভিযোগ করে সাফের সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। অনুশীলন শেষে আমরা হোটেলে খেতে যেতেই পারি। কিন্তু অনেক কর্মকর্তা আছেন, এ নিয়ে যারা কোচের কান ভারি করেন। পরে মাঠে গিয়ে কোচ আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে খোটা দেন।
বলেন, আমাদের নাকি অনুশীলনে মনোযোগ নেই। নেপালে যাওয়ার আগেও আমার সঙ্গে মাঠে অনুশীলনে বাজে ব্যবহার করেছেন কোচ।’
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা সবাই পেশাদার। আমাদের খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। যখন আমরা আগে বড় ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হারিয়েছি, তখনকার কোচকে দেশসেরা বলা হয়নি। এখন বাটলারকে যেমনটা বলা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দলকে দাঁড় করিয়ে আমরা ফল এনে দেব। দেশকে এত কিছু এনে দিলাম, অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নিয়ে বিষোদগার করা হচ্ছে।
এটা কি আমাদের প্রাপ্য।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা চাই আমাদের সঙ্গে এসব যেন আর না হয়। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তাদের সমর্থনের জন্য।’