বর্তমান সরকার পাচারের টাকা ফেরত আনবে: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বর্তমান সরকার পাচারের টাকা কিছুটা হলেও ফেরত আনবে। মালয়েশিয়া পেরেছে, রুয়ান্ডা পেরেছে। আমরাও পারবো।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সাথে কথা হচ্ছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। রুয়ান্ডার সময় লেগেছে ৫ বছর। আমরা পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার কাজ শেষ করতে না পারলেও পরবর্তী সরকার সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে বলে আশা করছি। তা হলেই আমাদের এই উদ্যোগের সুফল মিলবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টন টাওয়ারে অবস্থিত ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএর) মিলনায়তনে ‘সেমিনার অন বাংলাদেশ ম্যাক্রোইকোনোমিক ল্যান্ডস্কেপ: চ্যালেঞ্জেস ইন দ্যা ব্যাংকিং সেক্টর অ্যান্ড দ্যা পাথ এহেড’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
পাচারের টাকা ফেরত আনার বিষয়ে গভর্নর বলেন, কোনো দেশই পাচার করা টাকা ৫ বছরের আগে ফেরত আনতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করছি। হয়তো কিছু টাকা ফেরত আনা সম্ভব হবে। কিন্তু আমরা আশা করবো পরবর্তী সরকার এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ইআরএফ আয়োজিত ওই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তবে বিদেশি মুদ্রা ও রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। রিজার্ভের পতন কিছুটা হলেও থামানো গেছে। রেমিট্যান্স ২৪ শতাংশ বেড়েছে। এ মাসে ৩০ শতাংশ ছাড়াবে। এ বছর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ছাড়াবে। এর মূল কারণ টাকা পাচার ঠেকানো গেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে না। ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দরের ব্যবধান নেই বললেই চলে।
রেমিটেন্সের দর ম্যানিপুলেশন হচ্ছে না দাবি করে গভর্নর বলেন, দুবাইয়ে একটা গ্রুপ ডলার ম্যানুপুলেশন করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা এতে প্রভাবিত হইনি।
তিনি আরও বলেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার কারণে প্রাইভেট সেক্টর ক্রেডিট গ্রোথ কমেছে। পলিসি রেট বাড়ার কারণেই তা কমেছে সেটা নয়। সরকারের ঋণ ১২ শতাংশ ছিল সেটা কমে ৯ শতাংশ হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে ঋণ দিতে হবে। বসে বসে পয়সা কামানো ব্যাংকিং নয়।
ব্যাংকিং খাত বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারের কথা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, কোনো একক পরিবার যদি একটি ব্যাংকের ৮৭ শতাংশ টাকা নিয়ে যায়, সেই ব্যাংক দাঁড়াতে সময় লাগে। এত কিছুর পরেও ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা ঋণ দেয়া শুরু করেছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি এক দিনে হয়নি। পলিসি করার পর অন্তত ১৮ মাস সময় লাগে এর বাস্তবায়ন ঘটাতে। আমাদের ক্ষেত্রে ছয় থেকে সাত মাস হয়েছে। অন্তত আরও পাঁচ মাস লাগবে। তখন এর একটি ভালো প্রভাব দেখতে পাবো।
৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল। রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেটও ভালো। আমাদের রেমিটেন্সের প্রবাহ ভালো।
এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বিষয়ে গভর্নর বলেন, আমাদের সমগোষ্ঠী কোনো দেশ এখন আর এলডিসিতে নাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালেই এলডিসি থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশের শিল্প খাতের চাপে আমরা এলডিসি উত্তরণের সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালে নিয়ে আসি। গ্রাজুয়েশনের অনেক ভালো দিক আছে। দরিদ্র হয়ে থাকার মধ্যে কোনো সম্মান নেই। আমরা কেন মধ্য আয়ের দেশ হতে পারবো না। আমরা তো মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে আছি। কেন আমরা ট্যারিফের সুবিধার জন্য নিম্ন আয়ের দেশ হয়ে থাকবো।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন ইআরএফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মানিক মুনতাসির।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হলো, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত। তবে এনবিআরের কার্যকর সংস্কার না হলে ব্যাংক খাত এগোবে না।
তিনি বলেন, পাচারের টাকা ফেরত আনা সম্ভব। এজন্য পাচারকৃত অর্থের আলটিমেট বেনিফিসিয়ারি কে তা খুঁজে বের করতে হবে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৪ শতাংশ। এখন সেই ব্যাংকটি একটি ভালো ব্যাংকের পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা আরও সুগঠিত করার সুপারিশ করেন পূবালী ব্যাংকের এমডি।
তিনি বলেন, আইটি বেইজড সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে পলাতক কেউ ই-কেওয়াইসি দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে অন্য ব্যাংকের রিয়েল টাইম ইন্টিগ্রেশন থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।