গাজা পুনর্গঠনে মিসরের প্রস্তাব গ্রহণ করল আরব দেশগুলো

গাজা পুনর্গঠনের জন্য মিসরের দেওয়া প্রস্তাব আরব দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) কায়রোতে আয়োজিত আরব লীগ সম্মেলনে এই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এই পরিকল্পনাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যেখানে গাজার পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি জানিয়েছেন, কায়রোতে আয়োজিত সম্মেলনে গৃহীত এই প্রস্তাবে হামাস সমর্থন দিলেও, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এর সমালোচনা করেছে।
গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা পুনর্গঠনে একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা উত্থাপন করেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভিয়েরা’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এই পরিকল্পনা ইসরায়েল ছাড়া প্রায় সব দেশই প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন— এর শাসনের দায়িত্ব কে নেবে এবং পুনর্গঠনের অর্থ কীভাবে আসবে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে স্বাধীন ও পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়ে একটি প্রশাসনিক পরিষদ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের সমাপ্তির পর এই পরিষদ গাজার শাসনভার গ্রহণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই পরিষদের মূল দায়িত্ব হবে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে প্যালেস্টিনিয়ান অথোরিটির (পিএ) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, যারা ২০০৭ সাল থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা মিসরের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ট্রাম্পের উচিত এমন কোনো পরিকল্পনা সমর্থন করা, যেখানে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করতে হবে না।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিসরের পরিকল্পনাকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, এই পরিকল্পনায় প্যালেস্টিনিয়ান অথোরিটির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু হামাসকে পুরোপুরি অকার্যকর করার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিকল্পনায় অসন্তুষ্ট। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, গাজা বর্তমানে বসবাসের অনুপযোগী অবস্থায় আছে, যেখানে ধ্বংসাবশেষ ও অবিস্ফোরিত অস্ত্রের মধ্যে মানুষের টিকে থাকা কঠিন। তার মতে, মিসরের পরিকল্পনা এই বাস্তবতাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আগের পরিকল্পনাতেই অটল থাকবেন এবং ‘হামাস মুক্ত’ একটি বাসযোগ্য গাজা দেখতে চান।
গাজা পুনর্গঠনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত থাকলেও, আরব দেশগুলোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় নতুন একটি সমাধানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরোধিতা এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।