এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত থাকতে ইআরডি সচিবের আহ্বান

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব এম শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেছেন, এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি উত্তরণের ফলে সৃষ্ট বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করতে হবে।
আজ সোমবার এখানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিশেষজ্ঞদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইআরডি সচিব এম শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ‘এলডিসি-পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সকল স্তরে সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।’
তিনি জানান, এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের চাহিদা নির্ধারণ ও সমাধানের লক্ষ্যে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি প্রণয়ন করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তবে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবের বর্তমান অবস্থার বেশ উন্নতি হওয়ায় এক্ষেত্রে আশার সঞ্চার হচ্ছে।
তথ্যগত বিভ্রান্তি ও ব্যবধান দূর করতে সরকারকে ইউএনএসক্যাপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
তিনি জানান, সরকারের সকল স্তরের কার্যক্রম ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুরু থেকেই যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ঘাটতি ছিল। টেকসই উপায়ে এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামতের ওপর বেশি আলোকপাত করতে হবে।
তিনি তৈরি পোষাক খাতের পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি প্যাকেজিং খাতের উন্নয়নের উপর মনোযোগী হওয়ার জন্য বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি খাতের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিরতা, শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চ সুদ হার ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে আমাদের বেসরকারি খাত প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে ২-৩ বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৮%, যেখানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৪৩%। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে ৫টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস)’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফ্রেমওয়ার্কের বাস্তবায়ন, শক্তিশালী নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার, পার্টনারশিপ ও সহমর্মিতা, নীতির সমন্বয়, অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
স্বাগত বক্তব্যে ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি’র প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে আমাদের বেসরকারি খাত। এমতাবস্থায় বেসরকারি খাতের সহায়তার পাশাপাশি এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সার্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রণীত এসটিএস বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত কার্যক্রম একান্ত অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এসএসজিপি’র কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মো. রেজাউল বাসার সিদ্দিক, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান, আনোয়ার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ-এর সাবেক পরিচালক আসিফ আশরাফ, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।