৮ বছর পর পরিবারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন

শেয়ার করুন

দীর্ঘ আট বছর পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তিন নাতনির সঙ্গে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন।

আজ রোববার (৩০ মার্চ) লন্ডনে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য সেখানে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় রয়েছেন তিনি। সেই সুবাদে বেশ কয়েক বছর পর মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারেক রহমান। সকলের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের পরিবারের সঙ্গে ছবি শেয়ার করেছেন তারেক রহমান।

সেই ছবিতে তারেক রহমানের মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জায়মা রহমানও রয়েছেন।

ছবিটি শেয়ার করে তারেক রহমান ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। আমি সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ঈদ মোবারক।’

তিনি বলেন, ‘১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্যাতিত জনগণ প্রার্থনা করে এসেছেন যে তারা একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে ঈদ উদযাপন করবেন; যেখানে স্বৈরাচার তাদের কণ্ঠস্বরকে দমন করতে পারবে না।

২০২৪ সালে সেই প্রার্থনার প্রতিফলন এসেছে। এক ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দুই হাজারেরও বেশি জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে। প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই ঈদে আমরা স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত একটি দেশে পবিত্র রমজান মাসের পর এই বরকতময় দিনটি উদযাপন করছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমি এই স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার জন্য এবং সেই সংগ্রামের ক্ষত বহনকারী শহীদদের জন্য প্রার্থনা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সর্বজনীন ঐক্যের এই উৎসবে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতাকর্মীসহ সকল বাংলাদেশির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, স্বৈরাচারমুক্ত দেশে আমাদের প্রথম ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন এমন পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিন।’

তারেক রহমান এ-ও বলেন, ‘যাদের সময় এবং সামর্থ্য আছে তাদের প্রতি আমি অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের কমিউনিটির মানুষের যত্ন নিন, আপনাদের সহকর্মী দেশবাসীর প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। এতিমখানার শিশুদের সাথে খাবার ভাগাভাগি করুন—যুবকদের যারা পরিবারের অনুপস্থিতিতে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বাড়িতেই ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য। দরিদ্রদের প্রতি আপনাদের সমর্থন জানান, যাতে অর্থনৈতিক দুর্দশা তাদের আনন্দের এই মুহূর্তটি কেড়ে না নেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের কাছে আবেদন করছি যে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আরোপ করা থেকে বিরত থাকুন, যাতে ঘরমুখো যাত্রীরা বাড়তি বোঝা ছাড়াই তাদের পরিবারের সাথে ঈদের জন্য পুনরায় মিলিত হতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যখন উৎসব উদযাপন করছি অতীতের শক্তিগুলো আমাদের জাতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমি সকল নাগরিককে সতর্ক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যারা এই কষ্টার্জিত শান্তি বিঘ্নিত করতে চায় তারা যেন তাদের এজেন্ডার জন্য ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাতে না পারে। যদি আমরা একসাথে দাঁড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে এই শক্তিগুলো আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়কে নষ্ট করার ঝুঁকিতে ফেলতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরিশেষে, আমি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলাকে ঈদের সময় আরো সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি; যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তাদের জনসাধারণের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি করা থেকে বিরত রাখতে।’

‘স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রথম ঈদ হোক সকলের জন্য শান্তি, ঐক্য এবং আনন্দের ভাগাভাগি। আমি আল্লাহর কাছে এই আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।’

এর আগে, স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় কিংসমেডাও স্টেডিয়ামে ঈদের নামাজ আদায় করেন তারেক রহমান। নামাজে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। নামাজ শেষে সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করেছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর কারাবাস ও গৃহবন্দিত্বের কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন সম্ভব হয়নি।

২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি অবস্থায় দুটি ঈদ কাটিয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকায় ঈদ সেখানেই উদযাপন করতে হয়েছিল। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গৃহবন্দি অবস্থায় ফিরোজা বাসভবনে ঈদ করেছেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে ঈদ উদযাপন করছেন। দীর্ঘ সাত বছর পর এবার পুরোপুরি মুক্ত অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করছেন খালেদা জিয়া।

এদিকে ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদ উদযাপন করবেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করবে বিএনপি।

বর্তমানে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির সূত্র অনুযায়ী, আগামী এপ্রিল মাসের যেকোনো সময় তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন

Similar Posts