বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের

শেয়ার করুন

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে ওঠা ইসলামিক স্টেটের একটি নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার কথা জানালেন দেশটির পুলিশ প্রধান।

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত তিন মাসে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করে মালয়েশিয়ার পুলিশ।

আটককৃতরা বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস সদস্যদের অর্থায়ন করতো বলে জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

গত ২৭শে জুলাই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইলের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম জানায়, এপ্রিল থেকে কয়েক ধাপে অভিযান চালিয়ে ৩৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব নিলেন শমীক ভট্টাচার্য।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল জানান, স্পেশাল ব্রাঞ্চ কাউন্টার টেররিজম ডিভিশন আটককৃতদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে এবং অনুসন্ধান চালায়।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এই দলটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএসের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তহবিল যোগাড় করতো, বলেন মি. ইসমাইল।

মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম দ্য স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গেরাকান মিলিটান র‍্যাডিক্যাল বাংলাদেশ’ বা ‘জিএমআরবি’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে তৎপরতা চালাতো তারা।

“তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একশো থেকে দেড়শো সদস্য রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রত্যেক সদস্যকে সদস্য ফি বাবদ বার্ষিক ৫০০ রিঙ্গিত (প্রায় ১৪ হাজার টাকা) দিতে হতো। যদিও, চাঁদার পরিমাণ সদস্যদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল,” মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধানকে উদ্ধৃত করেছে দ্য স্টার।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, আইএসের এই নেটওয়ার্কটি সদস্য সংগ্রহের জন্য অন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের টার্গেট করতো। এ কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতো তারা।

বার্তা সংস্থাটি আরো জানায়, “সিরিয়া ও বাংলাদেশে অর্থ পাঠাতে আটককৃতদের আন্তর্জাতিক ফান্ড ট্রান্সফার সার্ভিস এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহারের” কথা বললেও কী পরিমাণ অর্থ তারা সরবরাহ করেছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান পুলিশ প্রধান।

প্রতিবেশী কোনো দেশ বা আর অন্য কোথাও আইএস গোষ্ঠীর সাথে তারা যোগাযোগ বজায় রাখছে কি না, প্রশ্ন করা হলে মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, গ্রেফতার বাংলাদেশিদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

বাকিদের মধ্যে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্যে ইমিগ্রেশন ডিপার্টেমেন্টের কাছে হস্তান্তরের কথা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক।

খালিদ ইসমাইল বলেন, অপর ১৬ জনের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে এবং তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেন।

তিনি জানান, ‘সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে’ মালয়েশিয়ায় আটক ৩৬ জন বাংলাদেশি সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত জানতে চাইবে।

এবিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও কয়েকজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তাদের আদালতেই দায়ের হতে পারে, “আর বেশ কিছুকে তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে” বলেছেন মি. হোসেন।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এনিয়ে বিস্তারিত জানার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

“বেশ কিছুকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। ফেরত পাঠিয়ে দিলে স্বাভাবিকভাবে আমাদেরও চেক-আপ করতে হবে আসলে তাদের কতটুকু কি সম্পৃক্ততা আছে, কোন সংগঠনের সাথে, সেটা আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে,” বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এমন ঘটনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের ভিসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে মি. হোসেন বলেন “যে কোনো নেতিবাচক বিষয়ই ভিসা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, ফেলবে না আমি এ কথা বলতে পারি না। আমাদের দেখতে হবে যেন আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিই, তাহলে সেটা মিনিমাইজ করা যাবে।”

বিবিসি বাংলা।


শেয়ার করুন

Similar Posts