যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে তিন দিনের আলোচনা শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত পাল্টা শুল্ক হার কমাতে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) প্রথম দিনের আলোচনা হওয়ার কথা। তিন দিনের আলোচনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনাকাটা বাড়াতে প্যাকেজ প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল– বাংলাদেশ বিমানের জন্য বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার পাশাপাশি সামরিক বিমান বা অন্য কোনো কেনাকাটার উদ্যোগ আছে কিনা– এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আরও আছে। কী কী কিনব সেই প্যাকেজ বাণিজ্য উপদেষ্টা নিয়ে গেছেন।’ অর্থ উপদেষ্টা এর বেশি কিছু না বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা ফিরলে তাঁকেই জিজ্ঞাসা করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। সরকারি প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবে। এসব বৈঠকে পণ্য আমদানির সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যা আগামী ১ আগস্ট কার্যকর হওয়ার কথা। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানো এবং তাদের পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাল্টা শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আগে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্যে বর্তমানে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। বর্তমানে যা ২২ থেকে ২৩ শতাংশ।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন সবার জন্য ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক রেখে সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। স্থগিতাদেশের সময় শেষ হওয়ার আগেই ৮ জুলাই ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার হবে ৩৫ শতাংশ। দেশভিত্তিক পাল্টা শুল্ক কার্যকরের পর সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ তার সঙ্গে সমন্বয় হবে।
ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে জানিয়েছিলেন, বৈঠকের আগে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশের অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। অবস্থানপত্রের ওপর তিন দিনের আলোচনার ভিত্তিতে পারস্পরিক বাণিজ্য নিয়ে চুক্তি হতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার। এত বড় বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও তারা পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার চুক্তি করেছে। ভিয়েতনামের পক্ষে বাণিজ্য ঘাটতি ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার।
আগামী এক থেকে দেড় বছরে এ ঘাটতি অনেক কমে যাবে। বাড়তি আমদানি হবে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রকে সেভাবেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তারা আশা করছেন, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক হার ভিয়েতনামের চেয়ে কম হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যতদূর আভাস পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ শুল্ক হারে সমঝোতা করতে পেরেছে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশটি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর সাত লাখ টন করে গম আমদানি করতে এমওইউ সই করেছে। এর পাশাপাশি সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।