পরিবারের ৪ জনই অন্ধ, দেখার কেউ নেই

আলোর পৃথিবীর সবটুকুই অন্ধকার রয়ে গেলো। জীবন ও জীবিকাও দুর্বষহ কষ্টের। ৬ জনের পরিবারে ৪ জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁদের মধ্যে পরিবারের প্রধান মো: কামাল হোসেন মাঝি নিজেও একজন। জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষটির জীবনের শুরু হয়েছিল বড় একটি স্বপ্ন নিয়ে। তিনি একদিন ধর্মিয় বক্তা হবেন। মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করবেন, হামদ-নাত গাইবেন, মানুষকে আলো দেখাবেন। মুখস্থ করেছিলেন পবিত্র কোরআনের ১৫টি পারা। কিছুদিন মাদ্রাসায়ও পড়েছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি।
অভাব আর দারিদ্র্য তাঁকে নামিয়ে এনেছে এমন এক বাস্তবতায়, যেখানে এখন তাঁর একমাত্র চাওয়া-দুই বেলা খেতে পারা আর মাথার ওপর ছাউনি। তিনি ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মেঘনার তীরবর্তী কন্দকপুর গ্রামে থাকেন।
জানা গেছে, কামালের জন্ম ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর গ্রামে। বাবা চাষাবাদ করতেন। মেঘনার বারবার ভাঙনে সব হারিয়ে দক্ষিণ রাজাপুরে এসে সরকারি পতিত জমিতে ঘর তোলে পরিবারটি। কামাল ছোটবেলায় ওস্তাদের মুখে শুনে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। কিছুদিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়লেও অর্থাভাবে তা থেমে যায়। সেই সময়েই বক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে। কিন্তু পরিবারের অভাব তাঁকে স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে কামালের স্ত্রী তানজিলা ছোট ছোট কাজ করেন। যেমন-শাকপাতা বিক্রি, হাঁস-মুরগি পালন করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। একসময় ৪টি গরুর মালিকও হন। কিন্তু ২০২৪ সালে এক রাতে ২টি গরুই চুরি হয়ে যায়। তানজিলা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন গরুগুলো, পাননি। মানুষের সহায়তায় ১টি বাছুর কেনেন, আর মৎস্য বিভাগ আরও ১টি দেয়। এখন সেগুলো বড় হচ্ছে। গরু দুটি এখন তাঁদের সম্বল।
জনতাবাজার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে তাঁর ঘর। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তা পেরিয়ে কোনো রিকশা যায় না, হাঁটতে হয়। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কামালের বাড়ীতে গিয়ে জানা যায়, কামালের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী মোসাম্মৎ তানজিলা বেগম (৩৯) ও ছোট মেয়ে উম্মে হাবিবা (৭) ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর বড় মেয়ে কামরুন নাহার (২৫), ছেলে আবুল বাশার (১৩), মেঝ মেয়ে শশী আক্তার (১০) এই ৩ জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এছাড়া ২ মেয়ের স্বামীও প্রতিবন্ধী। বড় জামাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, মেঝ জামাই শারীরিকভাবে অক্ষম। কারও তেমন উপার্জন নেই।
কামাল বলেন, “এই বছর বৃষ্টির শেষ নাই। আসমান দিয়াও পড়ে, জোয়ারে গর-বিডি ডুবি যায় (ঘরি ভিটা ডুবে যায়)। বৃষ্টিরসুম (বৃষ্টির সময়) গরে-বাইরে (ঘরে-বাইরে) একাকার।”
স্ত্রী তানজিলা বেগম বলেন, “পুতেরে (পুত্র) একজন এক্টা (১টা) ছাগল ছদকা (দান) দিছিল (দিয়েছে)। হেইডা বেইচ্চা (বিক্রি করে) চালে টিন লাগাইছি। এহোনো ব্যারা ভাঙ্গা।”
অসহায় এ পরিবারটির সার্বিক সাহায্য প্রয়োজন। বিত্তবান এবং সরকারের সমাজসেবা বিভাগ এ বিষয়ে মানবিক নজর দেয়া জরুরি।