কলাপাড়া: প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে হতাশার যেন শেষ নেই

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে হতাশার যেন শেষ নেই। একদিকে শিক্ষক সংকটে অর্জিত হচ্ছে না শত ভাগ শিখন ফল। অপরদিকে অপ্রতুল সড়ক যোগাযোগ, প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ লোপাট, শিক্ষকদের স্কুলে অনুপস্থিতি, ব্যবসা-বানিজ্য ও সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন, কোচিং বানিজ্য এবং দারিদ্র্যতায় কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকায় প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার বাড়ছে, এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র জানায়, উপজেলার দুর্গম জনপদ চম্পাপুর ইউনিয়নের ৭৬ নম্বর পূর্ব পাটুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩১৫। শিক্ষক রয়েছে মাত্র দু’জন। মর্নিং শিফটে শিশু শ্রেনীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৮ জন, ১ম শ্রেনীতে ৫১, ২য় শ্রেনীতে শিক্ষার্থী। ডে শিফটে ৩য় শ্রেনীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৫ জন, ৪র্থ শ্রেনীতে ৫৬ এবং ৫ম শ্রেনীতে ৪০। বিদ্যালয়টি থেকে এ বছর ১৪ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে বলে জানায় সূত্রটি। তবে স্কুল থেকে কতজন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে সে তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ’দীর্ঘবছর শিক্ষক সংকটে স্কুলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক টানা উপস্থিত থাকতে হচ্ছে, একটুও বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই। এত কাজের চাপে ৩ বার মাইনর ষ্ট্রোক ও কিডনি জটিলতায় ভুগছি। এরপরও স্কুলে চলমান ১ম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত ২য় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষার সকল কাজ সহ দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য হচ্ছি। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পর অন্য স্কুল থেকে সম্প্রতি একজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে দিয়েছে।’

উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের ৭৮ নং খাঁজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর পার্শ্ববর্তী গ্রামে হলেও স্কুলটির চারপাশে কোনো পাকা সড়ক না থাকায় বর্ষা মৌসুমে হাঁটু সমান কর্দমাক্ত রাস্তায় শিক্ষার্থীদের হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয় সড়কে দু’টি ভাঙা কাঠের সাঁকো। ছোট ছোট শিশুরা এক হাতে স্কুলব্যাগ, অন্য হাতে ভেজা জামা সামলে টলমল পায়ে সাঁকোতে ওঠে। আর সামান্য অসাবধানতায় সাঁকো থেকে নীচে পড়ে যায়। এভাবে প্রায়শ:ই দুর্ঘটনায় হাত-পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত হয় শিশুরা। বই-খাতা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। এতে স্কুলে যেতে অনীহা তৈরি হচ্ছে শিশুদের। এ কারণে বৃষ্টির দিনে স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি অর্ধেকের নীচে নেমে আসে, এমন তথ্য জানা যায় শিশুদের পরিবার সূত্রে। এ স্কুল সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেও ঝড়ে পড়া শিশুদের তথ্য জানা যায়নি। তবে স্কুলের সময় নদী পাড়ে, সমুদ্র তীরে দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকদের সঙ্গে চিংড়ি রেনু সংগ্রহের কাজে দেখা মিলছে প্রাথমিক স্তর থেকে ঝড়ে পড়া অনেক শিশুকে।
অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, খাঁজুরা এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে দুইটি কালভার্ট সহ রাস্তা পাকাকরণ প্রয়োজন। বহুবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে হতাশা বাড়ছে এলাকায়। বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার শঙ্কা।
প্রাথমিকের অপর একটি সূত্র জানায়, উপজেলায় ১৭১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩১৫০ জন। কিন্তু সমন্বিত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা তথ্যে (আইপিইএমআইএস) যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য ইনপুট না দেয়া এবং যথাযথ কাগজপত্র সংরক্ষন না করায় ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ১২৬০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩১টি, সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ১১৪টি। এছাড়া দীর্ঘ বছর ধরে শিক্ষা অফিসে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে ৩টি, উচ্চমান সহকারী ১, অফিস সহকারী ১ এবং হিসাব সহকারী পদ শূন্য রয়েছে ১টি। জনবল সংকটে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যহত হচ্ছে বলে দাবী সূত্রটির।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহিদা বেগম বলেন, জনবল সংকটে প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি অচিরেই সংকট সমাধান হবে।
সাহিদা বেগম আরও বলেন, উপজেলার দাসের হাওলা স্কুল ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অচিরেই অস্থায়ী টিনশেড শ্রেনীকক্ষ তৈরী করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া বেশ কিছু স্কুলের সড়ক যোগাযোগ দুর্গম হওয়ায় ওই সড়ক গুলো সংস্কার করা জরুরী। এ বিষয় গুলো উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভা সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।