কোনো পড়াশোনা কিংবা চিকিৎসা সনদ নেই, অথচ ক্লিনিকে চোখ ও দাঁতের চিকিৎসা দিচ্ছেন দু’ভাই

শেয়ার করুন

চোখের চিকিৎসা পরামর্শ দেয়ার মতো কোনো পড়াশোনা কিংবা চিকিৎসা সনদ নেই হাকিমের। অথচ তিনি চেম্বার খুলে নিজের নামে প্যাড ছাপিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে নিয়মিত রোগী দেখছেন। আর তার অপচিকিৎসায় চোখ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার অভ্যন্তরে বসবাসরত একাধিক হতদরিদ্র মানুষ।

হাকিমের অপর ভাই হারুন। দেশের কোনো ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস ডিগ্রি কিংবা ন্যুনতম পড়াশোনা নেই তার। অথচ তিনিও মহিপুর থানা সদরে এশিয়া ডেন্টাল ক্লিনিকে বসে ভিজিট নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা কার্যক্রম। ডাক্তার না হয়েও নামের আগে লিখেন ডাক্তার। এনিয়ে রোগী ও এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ভাই হাকিমের নাম ছাপানো ব্যবস্থাপত্রে চক্ষু রোগের চিকিৎসা দেন হারুন-অর-রশীদ।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আদনান (৪) নামের এক শিশুকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন আদনানের পরিবার। চক্ষু সেবা কেন্দ্রের সত্বাধিকারী ডাক্তার আব্দুল হাকিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে তার ব্যবস্থাপত্রে হাকিম হয়ে চিকিৎসা দেন তার ভাই হারুন, তবে নিজের পরিচয় গোপন করে। বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, ডাক্তার হাকিমকে ছবি দেখিয়ে তার প্যাড ব্যবহার করে চিকিৎসা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি সরাসরি চিকিৎসক নই, তবে যা লিখেছি তাতে রোগী সুস্থ্য হয়ে যাবে”

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এশিয়া ডেন্টালে এমন অনিয়ম চলছে। রোগীদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে ডা. হাকিমের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজে না থেকে অন্যদের দিয়ে নিজের নাম-ঠিকানা সম্বলিত প্যাডে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন।

মহিপুর এলাকার সেরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ-জাহান কাজী জানান, এই হারুনতো দাঁতের চিকিৎসাই ভুল করে সেখানে অন্য চিকিৎসা দেয় কেমনে? সেরাজপুরের হারুন মাঝির সমস্যা এক দাঁতে তিনি তুলে দিয়েছেন অন্য দাত, এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মহিপুরের বাসিন্দা সোহেল হাওলাদার বলেন, আমরা জানি সে দাঁতের চিকিৎসা দেন, তার ভাই চোখের চিকিৎসা দেন৷ তবে সেও তার ভাই’র প্রেসক্রিপশনে চোখের চিকিৎসা দেন। এগুলো নিয়ে প্রায়ই রোগীদের সাথে ঝামেলা হয়। কিন্তু সেটা বন্ধ হচ্ছে না, সে দিয়েই যাচ্ছে। তার চোখের বিষয়ে কোনো ধারনা নেই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হারুন অর রশীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্যপাওয়া যায়নি।
অপর ভাই হাকিমের মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তার সাথে দেখা করতে বলেন। মোবাইল কোনো কথা বলবেন না বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, একজনের ব্যবস্থাপত্রে অন্য কেউ চিকিৎসা দেওয়ায় সুযোগ নেই। শীঘ্রই বিষয়টি খতিয়ে দেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতা নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, একজনের প্যাডে অন্য কেউ প্রেসক্রাইব করার সুযোগ নেই। এটা অপরাধ, খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন

Similar Posts