সফল ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং ও অংশীদারিত্ব গড়ে শেষ হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো’

দেশের সাইবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা শিল্পের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রায় তিন হাজার ভিজিটর, ট্রেডার ও ডেলিগেটদের অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও সহযোগিতার সুযোগ। তিন দিনজুড়ে চলল প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ভিজিটর ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রাণবন্ত মেলবন্ধন। অংশগ্রহণকারীর মধ্যকার মতবিনিময় ও নেটওয়ার্কিং হয়ে উঠল নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। এভাবেই শেষ হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো ২০২৫’।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) প্রথমবারের মতো এই প্রদর্শনী শুরু হয়ে শেষ হয় শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায়।
তিনদিন ধরে ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো ২০২৫’ আয়োজন হয়েছে। এর সফলতা নিয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান আই-স্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মধু সুদন সাহার বক্তব্য
আয়োজনের সফলতা নিয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান আই-স্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মধু সুদন সাহা বলেন, “তিনদিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো ২০২৫’ আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই আয়োজনটি। দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপক আগ্রহ প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খাতে নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই সাফল্য আমাদেরকে ভবিষ্যতে আরও বড় আয়োজনের অনুপ্রেরণা দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ প্রদর্শনী নতুন ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও সহযোগিতার দ্বার খুলে দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।”
লাইফব্রিজ কোম্পানির হার্ডওয়ার্ক ও নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, সুরক্ষা প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন মিরান্ডা লো। তিন দিনের মেলায় কেমন সাড়া পেলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘প্রদর্শনীর পরিবেশ অনেক সুন্দর। বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্তরিক ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিকে পছন্দ করেন। তিনদিনে ২০০ এর বেশি বাংলাদেশি ট্রেডার ও ডেলিগেটের সাথে সন্তোষজনক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। এ আয়োজনে এসে আমাদের লাইফব্রিজ কোম্পানির অনেক ব্র্যান্ডিং হয়েছে। আমরা অনেক খুশি।’’
স্মার্ট টেকনোলজি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার রনি সাহা বলেন, ‘‘ভিডিও কনফারেন্সি সিস্টেম, ব্যাগেজ স্ক্যানার, বুম ব্যারিয়ার, ডিসপ্লে সলিউশনস, পিএ সিস্টেম বা পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, আইপি টেলিফোনি সিস্টেম, নার্স কলিং সিস্টেমসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সলুশন পণ্য নিয়ে তিনদিনের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছে স্মার্ট টেকনোলজি লিমিটেড। শুরুর দিন থেকেই আমরা ভাল সাড়া পেয়েছি। আমাদের কোম্পানির নিরাপত্তা সলিউশন বিষয়ক পণ্যগুলো দেখতে ও ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভিজিটর, ট্রেডার ও ডেলিগেট এসেছে।’’
আয়োজনে তিন দিনের অর্জন নিয়ে ওয়ালটন ডিজিটেকের সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘‘তিন দিনের এই আয়োজনে বেশির ভাগ করপোরেট ট্রেডার ও ডেলিগেট এসেছেন। আমরা প্রদর্শনীতে পিনভিউ ব্র্যান্ডের সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম এবং এসেন্টের স্মার্ট এক্সেস স্মার্টার কন্ট্রোল সিস্টেমের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করছি। আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি, সেটি পূরণ হয়েছে। আমার মতে, ব্যস্ত শহুরে মানুষের জন্য ভেন্যুটা একটু দূরে হয়েছে। প্রদর্শনীটা শহরে আয়োজিত হলে আরও বেশি সাড়া পাওয়া যেতো। তাই আগামীতে এই ধরনের নিরাপত্তা প্রযুক্তি বিষয়ক আয়োজন করলে আয়োজকদের ভেন্যু নির্বাচনে দূরত্বের বিষয়টি গুরুত্ব দিলে ভাল সাড়া মিলবে বলে আমার বিশ্বাস।’’

চীন থেকে ইবিকেএন কোম্পানির সফটওয়্যার সলুউশন নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পণ্য নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন সফি। তিনি দর্শনীতে সেলস ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিন দিনের আয়োজন নিয়ে অভিজ্ঞতার কথার বিষয়ে সফি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় একটি দেশ। এখানে ছোট দেশে অনেক মানুষ বসবাস করছে। সারা বিশ্বে প্রযুক্তি যেভাবে উন্নত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে প্রযুক্তির সাথে বেশি বেশি করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এ ধরনের আয়োজন বেশি করে করতে হবে। আয়োজন উপলক্ষে আমাদের কোম্পানির পণ্য নিয়ে যেসব লিফলেট ও ব্রুশিয়ার নিয়ে এসেছিলাম, সব শেষ। আমার ভিজিটিং কার্ডও শেষ। যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি, সেটার চেয়ে বেশি পূরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে চাই।’’
কম্পিউটার সিটি টেকনোলজিস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোডাক্ট ম্যানেজার সামসুল ইসলাম সাগর বলেন, ‘‘যেকোনো প্রদর্শনীতে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তির পণ্যগুলো একটি বিশেষ শ্রেণি মানুষের জন্য প্রদর্শন করা হয়। আমরাও এই আয়োজনে আমাদের দুটি ব্র্যান্ডের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পণ্য প্রদর্শন করছি। মেলায় যেমনটা প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি, তিন দিনে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পণ্য বিষয়ক ভিজিটর, ট্রেডার ও ডেলিগেটের সাথে সন্তোষজনক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের প্রদর্শনীর সময় আরও বাড়ালে ভাল হবে।’’
প্রদর্শনীটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে দেশের প্রযুক্তিপণ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আই-স্টেশন লিমিটেড, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যক সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও দুবাইয়ের প্রযুক্তি কোম্পানি জিপিই এক্সপো (এফজেডই)।
এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ৫০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষক পণ্য কোম্পানি, শাতাধিক ব্র্যান্ড এবং ৫ শ’র বেশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ অংশ নিয়েছেন।
তিনদিনের এই আন্তার্জাতিক প্রদর্শনীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ক প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করেছে। যেমন, কর্মস্থলের অগ্নি নির্বাপক নিরাপত্তা প্রযুক্তি, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম, স্বাস্থ্য ও অগ্নি নিরাপত্তা প্রযুক্তি, স্মার্ট সফটওয়্যার সল্যুশনস, সাইবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তির আধুনিক উদ্ভাবন, পণ্য ও সেবা, অত্যাধুনিক ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), নিরাপত্তা ক্যামেরা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সরঞ্জামাদি।