আমাদের সহযোগিতা অন্যের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে না ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। চীনের দিকে ‘ঝুঁকে’ পড়ায় বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা ও বেইজিংয়ের সহযোগিতা তৃতীয় কারও বিরুদ্ধে নয়। এ সহযোগিতা অন্যের নির্দেশনায়ও পরিচালিত হবে না।

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: এগিয়ে যাওয়ার পথ’ নিয়ে এক আলোচনার আয়োজন করে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসাডরস (এওএফএ)। সেখানেই প্রধান বক্তার বক্তব্যে ইয়াও ওয়েন এসব কথা বলেন। আলোচনায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা দুই দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি উল্লেখ করে ওয়েন বলেন, গণতান্ত্রিক যাত্রায় সঙ্গী হয়ে চীন একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ ও ভবিষ্যৎ গড়তে সহযোগিতা করতে চায়। সার্ক অকার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সুসম্পর্ক এ অঞ্চলের অগ্রগতিতে নতুন ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।

চীনের প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই) নিয়ে প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত সেপ্টেম্বরে সাংহাই কোঅপারেশন সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট জিজিআই ঘোষণা করেন। এটি ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়। আমরা সাবাই জানি, একটি দেশ তার নীতির মাধ্যমে বিশ্বে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করছে। ফলে দক্ষিণের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের কাছে যায়। আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষায় বিশ্বকে একত্র করতে তারা চীনকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানায়। ফলে আমাদের এসব আন্তর্জাতিক আইনকে সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে পুরো বিশ্বে জঙ্গলের শাসন কায়েম হয়ে যাবে।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। চীনকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই অনুরোধ করেছে। রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসনেও আমরা চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়টি একা চীনের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়, এটি চীনের সক্ষমতার বাইরে। কারণ এর সঙ্গে অনেক স্টেকহোল্ডার যুক্ত।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, তিস্তা প্রকল্পের অনুরোধটি বিগত সরকারের (আওয়ামী লীগ) ছিল। তারা এ প্রকল্পে চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিল। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমরা বিগত সরকারের কাছে তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব করেছিলাম। নদীর একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব আমরা করি। এর জন্য দুটি ভাগে প্রকল্পটিকে ভাগ করেছিলাম। প্রথমটি বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদীর বাঁধ তৈরি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে একটি শহরতলির মতো করে গড়ে তোলা, যেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থাকবে।

দুর্ভাগ্যবশত চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত তিস্তা প্রকল্প সম্পর্কে আমরা সরকারের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। এর কারণ আপনারা জানেন। যে কারণে আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে বেইজিং আবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে প্রস্তাব পেয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ প্রকল্প নিয়ে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে চীন। আমাদের বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে কাজ করছেন। এ প্রকল্পের খরচ প্রচুর, প্রায় ১০০ কোটি ডলার। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর সাত-আট বছর লাগবে তা সম্পূর্ণ হতে।

বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছি। আশা করছি আগামী নভেম্বরের মধ্যে নথিপত্রের সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত চীনের ৩০টি প্রতিষ্ঠান ১০০ কোটি ডলারের ওপর বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে।


শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত