সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বাধা ভারত সিএনএনের প্রতিবেদন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পথে বড় বাধা হয়ে উঠেছে ভারত। এক সময় তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রী। পরে হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর তিনি ভারতে স্বনির্বাসনে চলে যান। এখন বাংলাদেশ রায় কার্যকর করতে পারে যদি ভারত তাঁকে ফেরত পাঠায়।
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনের অভিযোগে তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর গত আগস্টে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ঢাকা তাঁর প্রত্যর্পণের দাবি জানাচ্ছে। তবে শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি।
বাংলাদেশি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, জনগণের রোষ থেকে বাঁচতে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। ভারতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এটি সত্যি ব্যতিক্রমী ঘটনা।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন ট্র্যাজেডি, নির্বাসন এবং ক্ষমতার এক জটিল আখ্যান। তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। ১৯৭৫ সালের আগস্টে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা, মা এবং তিন ভাইকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর তিনি ছয় বছর ভারতে নির্বাসিত ছিলেন। এই সময়েই ভারতের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা জন্মায়।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর প্রথম কাজ ছিল ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করা। ২০০৮ সালে তিনি আবার ক্ষমতায় ফেরেন। ছিলেন ক্ষমতায় টিকে থাকতে বদ্ধপরিকর। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছিল, তাঁর সরকার একদলীয় ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং গণমাধ্যম ও বিরোধী দলের ওপর হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হাসান বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি রক্তপাত ঘটিয়েছেন।
গত বছর শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল ব্যতিক্রম। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের মতে, প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। এই রক্তপাত আন্দোলনকে থামাতে পারেনি। বরং এটি জনরোষকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর সরকারের পতন ঘটায়।
মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে তাৎক্ষণিক প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করেছে। দিল্লি শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ভারতের কূটনীতিক অনিল ত্রিগুণায়ত।
ভারত ও বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি রাজনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত ব্যতিক্রম রয়েছে। কোনো অপরাধ যদি রাজনৈতিক প্রকৃতির হয়, তবে ভারত প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
অনিল ত্রিগুণায়ত বলেন, শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বা আন্তর্জাতিক আদালতে (হেগ) আপিল করার সুযোগ রাখেন। যেহেতু সব আইনি প্রতিকার শেষ হয়নি, তাই ভারত তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য তাড়াহুড়ো করবে না।
আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এবং অন্যান্য ছোট দলগুলোর জন্য আগামী নির্বাচন সুযোগ তৈরি করেছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই গভীর বিভাজন সহজে দূর হবে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হাসান বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সমঝোতা থেকে অনেক দূরে। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ হয়তো শেখ হাসিনা ছাড়া রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনার পতন কি বিষাক্ত যুগের অবসান নাকি অনিশ্চয়তার শুরু?
