আমতলীতে ধান কাটতে বাঁধা দেয়ায় চার নারীসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম

শেয়ার করুন

ধান কাটতে বাঁধা দেয়ায় চার নারীসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ গাজীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী এমন কান্ড করেছেন। গুরুতর আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে কদ ভানু ও নুর নাহারের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে আমতলী উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে।

জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের মন্নাফ হাওলাদার ও জামাল গাজীর মধ্যে ১৫ একর জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত ১১ নভেম্বর ওই জমির ঘাস কাটাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই পক্ষ মামলা করেন। জামাল গাজীর পক্ষের একটি মামলায় গত ২৪ নভেম্বর থেকে মন্নাফ হাওলাদার ও তার ১১ জন স্বজন জেল হাজতে রয়েছে। ওই সুযোগে জামাল গাজীর ভাই হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ গাজীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী শুক্রবার বিকেলে ওই জমির ধান কাটতে গেলে মন্নাফ হাওলাদার বাড়ীর নারীরা বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরিফ গাজী লোকজন কদভানু (৪৫), শেফালী (৪০), নুর নাহার (৩৫), মমতাজ (৭০) ও সাদ্দাম হোসেনকে (৩০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এ্যালোপাথারী কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ভুক্তভোগীরা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ ঘটনার পরপর আরিফ গাজীর লোকজন আহত কদভানুর ঘরে আগুন দেয় এমন অভিযোগ শহীদুল ইসলামের। শহীদুলের আরো অভিযোগ আহতদের বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আসা মাত্রই আরিফ গাজীর লোকজন হাসপাতালে চিকিৎসায় তাদের বাঁধা দেয়। এ সময় তারা শহীদুল নামের একজনকে মারধর করে। গুরুতর আহতদের আমতলী হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে জাকারিয়া, সগির ও লিপি বেগম নামের তিনজনকে আটক করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ গাজীর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ধান কাটা মেশিন নিয়ে জমির ধান কাটা শুরু করে। ওই সময় মন্নাফ হাওলাদারের বাড়ীর নারীরা বাঁধা দিলে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে।
মন্নাফ হাওলাদারের জামাতা শহীদুল ইসলাম বলেন, বিরোধীয় জমি নিয়ে গত ১১ নভেম্বর মন্নাফ হাওলাদার ও জামাল গাজীর দুই পক্ষের মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষ আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। জামাল গাজীর একটি মামলায় আমার শ্বশুর মন্নাফ হাওলাদারসহ ১১ জন জেল হাজতে রয়েছে। ওই সুবাধে আরিফ গাজীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী শুক্রবার বিকেলে ধান কাটতে যায়। ওই সময় আমার শ্বশুর মন্নাফ হাওলাদারের বাড়ীর নারীরা বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরিফ গাজীর লোকজন চার নারীসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতাল গেটে পৌছা মাত্র আরিফ গাজীর লোকজন আমাকে মারধর করেছে এবং আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে বাঁধা দিয়েছে।

হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ গাজী ঘটনা সঙ্গে তার জড়িতের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, গুরুতর আহত পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুই জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। তাদের কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ রয়েছে।

আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আরো আটক চেষ্টা অব্যাহত আছে।


শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত