তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন, ‘মাইনাস টু’ বিতর্ক এবং নির্বাচন

শেয়ার করুন

বাংলাদেশ আবার একটি রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য দেশে ফেরা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার “মাইনাস টু” তত্ত্বের পুনরুত্থান, এবং সামনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন—এই বিষয় সমূহ মিলেই বর্তমান রাজনীতিকে জটিল ও সংবেদনশীল করে তুলেছে।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার পর থেকে প্রায় সতেরো বছর ধরে তারেক রহমান নির্বাসনে অবস্থান করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে—তিনি “মিড-নভেম্বর ২০২৫”-এ দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন (তথ্যসূত্র: TBS News, Tarique Rahman set to return home mid-November ending 17 years exile )। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে—তিনি চাইলে এক দিনের মধ্যেই ট্রাভেল পাস পেতে পারেন এবং দেশে ফেরায় কোনো বাধা নেই (তথ্যসূত্র: The Daily Star, If Tarique wants to return, we can issue a travel pass tomorrow )। এতে বোঝা যায়—তার প্রত্যাবর্তন এখন আর কেবল রাজনৈতিক কল্পনা নয়; বরং একটি সম্ভাব্য বাস্তবতা।

কিন্তু একই সময়, রাজনীতিতে আবার আলোচিত হচ্ছে “নতুন মাইনাস টু”-র অভিযোগ। ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে “মাইনাস টু ফর্মুলা”—অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই শীর্ষ নেত্রীকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তা তখন ব্যর্থ হয়েছিল (তথ্যসূত্র: The Economist, The Minus Two Solution )। আজ, সেই ধারণা আবার নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে—বিশেষ করে বিএনপি নেতাদের তরফ থেকে। ঢাকা-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইনিক বাংলা সম্প্রতি জানিয়েছে—একটি “নতুন মাইনাস টু প্রক্রিয়া” সক্রিয় আছে বলে অভিযোগ উঠেছে (তথ্যসূত্র: Dainik Bangla, New minus two now active )।

এই দুই বিপরীত সংকেত— প্রত্যাবর্তনের খোলা পথ, অন্যটি নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করার অভিযোগ। নির্বাচনের আগে এই দুইটি বিষয়দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে দ্বিধা এবং সংশয়ে ফেলছে।

তারেক রহমান দেশে ফিরলে নির্বাচনে সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন—নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তিনি দেশে ফিরতে পারেন এবং দলের নেতৃত্ব দেবেন (তথ্যসূত্র: TBS News, Tarique will return after announcement of election schedule )। এই পরিস্থিতি একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী মাঠ সৃষ্টি করতে পারে—যা রাজনৈতিক স্থবিরতা দূর করবে এবং ভোটারদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।

কিন্তু যদি তার ফেরার পথ আইনি, নিরাপত্তাগত বা কূটনৈতিক অজুহাতে জটিল হয়ে পড়ে—যেমন অতীতে বিদেশি চাপের অভিযোগ উঠেছে—তাহলে নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র আবার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি বা নতুন ব্যাখ্যাও রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়াতে পারে (তথ্যসূত্র: The Daily Star, Tarique relieved in 2007–08 cases )।

এ অবস্থায় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা, হলেও কতটা রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে—সেটি নির্ভর করছে নিম্নক্ত বিষয়ের ওপর:
প্রথমত, তারেক রহমানের নিরাপদ ও নিঃশর্ত দেশে ফেরা সম্ভব হয় কি না।
দ্বিতীয়ত, “মাইনাস টু” ধরনের রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা বন্ধ থাকে কি না।
তৃতীয়ত, সব রাজনৈতিক দল সমান অধিকার নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে কি না।

এবারের নির্বাচন কেবল ক্ষমতা পাল্টানোর দিনে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ করবে। রাজনৈতিক সহনশীলতা, সংলাপ, অংশগ্রহণ—এই তিনটি চাবিকাঠি ছাড়া কোনো নির্বাচনই দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব আনতে পারে না।

বাংলাদেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে। রাজনীতির বড় নেতারা যদি দেশে ফিরতে পারেন, রাজনীতি যদি নেতৃত্বশূন্য না থাকে, এবং প্রতিটি দল যদি সমান সুযোগ পায়—তাহলেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন একটি প্রকৃত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হয়ে উঠতে পারে। আর যদি তা না হয়—তাহলে দেশ আবারও অকার্যকর ও একমুখী রাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে, যা গণতন্ত্রের জন্য নতুন উদ্বেগ বয়ে আনবে।

একটি সুস্থ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চাইলে আমাদের প্রয়োজন—স্বচ্ছতা, সচেতনতা এবং অযাচিত রাজনৈতিক প্রকল্প পরিহার। রাষ্ট্র, দল ও আন্তর্জাতিক মহল—সব পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকাই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতির প্রধান শর্ত।

মো: হাফিজ আল আসাদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক


শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত